তামাদি আইনকে বলা হয় শান্তির আইন, বিরামের আইন। তামাদি আইন স্বত্বের দ্বন্দ্বকে শান্ত করে, রোধ করে প্রতারণা। পুরাতনত্বের কারণে স্বত্বাধিকার প্রমাণের জন্য যে দৌর্বল্য সৃষ্টি হয়, তাহাতে এই আইন পুষ্টির যোগান দেয়। তামদি আইন ধরিয়া লয় যে, দাবি যাহার সত্য তিনি উহা আদায় করিবার জন্য ততপর হইবেন। বিপরীতভাবে যেই স্থানে এই ততপরতার অভাব প্রতীয়মান হয়, বুঝিতে হইবে যে, সেইখানে দাবির মধ্যে দবি আদায়ের ততপরতা না দেখাইলে তাহা নষ্ট হইয়াছে বলিয়া পরিগণিত হওয়া উচিত। তামাদি আইনের এই রক্তচক্ষু ও সাবধান বণী মানুষকে তাহাদের অধিকার সম্বন্ধে সচেতন রাখে, তাহাদিগকে অধিকতর মনোযোগী করে। মানুষ যেমন একদিকে মরণশীল আবার অন্যদিকে তাহার আয়ুষ্কাল ও খুব দীর্ঘ নহে। মরণশীল মানুষের সীমিত আয়ুর পরিপ্রেক্ষিতে তাহার স্বত্বাধিকার আদায়ের অধিকারের মেয়াদ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত প্রহণ করিতে হয়। কোন তর্ক, প্রশ্ন এবং বিবাদকে অনন্ত কাল বাচাইয়া রাখা মানুষ্যসমাজের পক্ষে নিতান্তই ক্ষতিকর। উপরক্ত সামাজিক শৃঙ্খলার কারণে এক সময় তাহার উপর ছেদ টানিতে হয় এবং তামদি আইন সেই ছেদের ব্যবস্থা করে।
এই যুক্তিসঙ্গত কারনেই তামাদি আইনকে সুবিচার, শান্তি এবং আরামের আইন বলিয়া বিবেচনা করা হয়। [8 All. 475.] তামাদি আইনে প্রনীত বিধানসমূহের মুখ্য উদ্দেশ্য হইতেছে দুর-অতীতের কোন বিবাদকে দীর্ঘদিন জিয়াইয়া রাখিবার পখে অন্তরায়ের সৃষ্টি করা। দেশের মনুষের স্বভাবতই জানিতে চায় যে, কত দিনে একটি বিশেষ প্রশ্নের শেষ জবাব মিলিবে। তামাদি আইন এই শেষ তারিখ ঘেষণা করে। তামাদি আইন স্পষ্ট এবং নির্দিষ্ট করিয়া দেশবাসীকে বলিয়া দেয় যে, একটি বিশেষ মেয়াদ অতিক্রান্ত হইবার পর কেহ আর তাহাদের স্বত্ব এবং অধিকারের উপর প্রশ্ন তুলিতে পারিবে না, তলিলেও তাহা ফলপ্রসূ হইবে না। [10. All. 587.] তামাদি আইন স্বত্ব সৃষ্টি করে না, শুধু সময়সীমা স্থির করিয়া দেয়।[28. Cal. 37] তামাদি আইন কখনোই কোন ব্যক্তিকে মামলা করিতে বলে না, শুধু ঘেষণা করে যে, একটি বিশেষ সময়সীমা অতিক্রান্ত হইবার পর আর মামলা করা চলিবে না। [24.Cal.1]
অতপর দৃষ্টিতে মনে হইতে পারে যে, তামাদি আইন সুনীতি-বিরুদ্ধে এবং জবরদস্তিমূলক। বলা যাইতে পারে যে, সত্য এবং ন্যায় দাবিতে শুধুমাত্র তামাদির অজুহাতে আইন দ্বারা নস্যাত করিয়া দেওয়া সততার পারিচায়ক নহে। কিন্ত এই অভিযোগ যথার্থ নহে । মানব জীবনে বিবাদ-বিসম্বাদের অন্ত নাই এবং একবার আরম্ভ হইলে তাহা আর শেষ হইতে চাহে না। সমগ্র অন্তর দিয়া তাহার পরিসমাপ্তি কমনা করে। তামাদি আইন সে ব্যবস্থাই করিয়ে দেয়। পৃথিবীর সকল সভ্য দেশে তামাদি আইন বিদ্যমান।