হিন্দু উত্তরাধিকার আইন (পর্ব একএর পর)
পর্ব এক এর পর
৮। কন্যার পুত্র বা দৌহিত্র বা নাতি
জীমুতবাহন বলেন কন্যা পিতার ত্যক্ত সম্পত্তিতে এ কারণে উত্তরাধিকার পায় যে সে এমন একজনের মাতা হতে পারে যে তার মাতামহের পিন্ড দান করতে পারে, ঠিক সে কারণে কন্যার পুত্র অথাত্ দৌহিত্রমৃতের পিতা এবং অন্যান্য আত্নীয় জীবিত থাকা সত্বেও মাতামহের সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার পায়। তবে দৌহিত্রের পুত্র উত্তরাধিকার পায় না কারণ সে পিন্ড দেবার অধিকারী নয়
৯। পিতা
৮ নম্বর বর্ণিত দৌহিত্র এর সাথে সাথে অধঃস্তন পুরুষের মধ্যে যারা পিন্ড দিতে পারেন । তাদের তালিকা শেষ হয়ে যাওয়াতে উত্তরাধিকার উধ্বগামী হয়। ধর্মীয় কারণে পিতা উত্তরাধিকার পান।
১০। মাতা
বলা বাহুল্য, মৃতের পিতা জীবিত থাকতে মাতা উত্তরাধিকার পায় না। মাতা অসতী হলে সে উত্তরাধিকার লাভের ক্ষমতা হারায়। তবে দ্বিতীয় বিবাহ করে থাকলে সে উত্তরাধিকার হারায় না। বিমাতার কোন উত্তরাধিকার নাই ।
১১। ভ্রাতা অর্থাত্ ভাই
জীমূতবাহন বলেন ভ্রাতার স্থান মাতার নিম্নে কিন্তু ভ্রাতুস্পুত্রের উপরে। ভ্রাতাদের মধ্যে সহোদর ভ্রাতারাই প্রথমে উত্তরাধিকার পায় এবং তাদের অবর্তমানে বৈমাত্রেয় (যেখানে মাতা দুইজন কিন্তু পিতা একজন) ভ্রাতারা পায়। এ কারণে সহোদর ভ্রাতারা পিতা ও মাতার দিকে পিন্ড দিতে পারে কিন্তু বৈমাত্রেয় ভাইয়েরা পিতৃকূলে পিন্ড দিতে পারে।
১২। ভ্রাতুষ্পুত্র প্রথমে সহোদর পরে বৈমাত্রেয়
ভ্রাতুষ্পুত্রের অবর্তমানে তার পুত্র পিন্ড দেবার অধিকারী বিধায় সেও উত্তরাধিকার পায়।
১৩। ভ্রাতুষ্পুত্রের পুত্র অর্থাত্ ভাইয়ের পুত্রের পুত্র:
১৪। ভাগিনেয় অর্থাত্ ভগ্নির পুত্র
১৫।. পিতামহ অর্থাত্ পিতার পিতা
১৬। পিতামহী অর্থাত্ পিতার মাতা
১। রাম তার ১ পুত্র এবং সহোদর ভাই রেখে মারা গেল। তালিকা অনুযায়ী রামের পুত্র রামের সমস্ত সম্পত্তি পাবে। কারণ পুত্রের স্থান তালিকাতে ১নং আর ভ্রাতা অর্থাত্ ভাইয়ের স্থান ১১ নম্বরে। উপরে উত্তরাধিকারী পাওয়া গেলে নীচের কেউ উত্তরাধিকারী হবে না।
২৷ বলাই তার ১ স্ত্রী এবং দুই পুত্র রেখে মারা গেল। এক্ষেত্রে বলাইর ত্যাজ্য বিত্ত সমান তিন অংশে ভাগ হবে ৷ বিধবা স্ত্রী পাবে এবং বাকী অংশ দুই পুত্র তুল্যাংশে পাবে। ১৯৩৭ সনের সম্পত্তিতে হিন্দু নারীর অধিকার সংক্রান্ত আইন বলে বলাইর স্ত্রী এক ছেলের সমান অংশ পাবে। প্রকাশ থাকে যে, বলাইর বিধবার জীবনস্বত্বে হবে এবং এবং তার মৃত্যুর পর ঐ অংশ পুত্রদের উপর বতাবে ৷
৩৷ যদু তার দুই ভাই ও এক বোন রেখে মারা গেল। এখানে দুই ভাই তুল্যাংশে পাবে। দায়ভাগ মতে বোন সপিন্ড নয়। যে ৫ জন মহিলা উত্তরাধিকারিত্বের দাবিদার তাদের মধ্যে বোনের নাম নাই সুতরাং বোন সম্পত্তি পাবে না।
৪৷ কৃষাণ তার ৪ কন্যা এবং মাতা রেখে মারা গেল। কন্যাদের মধ্যে একজন অবিবাহিতা, একজন বিবাহিতা এবং পুত্রবতী, একজন বন্ধ্যা, এবং অপর জন বিধবা এবং তার দুই কন্যা সন্তান আছে। এইক্ষেত্রে অবিবাহিতা কন্যার দাবি সর্বাগ্রে, সুতরাং অবিবাহিতা কন্যা কৃষাণের সব সম্পত্তি জীবনস্বত্বে পাবে অন্যান্য কন্যাগণ কোন অংশ পাবে না। মাতা ও কিছু পাবে না। কারণ কন্যাদের ৫ নং এবং মাতার স্থান ৮ নং।
৫। ভাদু এক পুত্র, অপর মৃত পুত্রের দিকের দুই পৌত্র এবং অপর মৃত পুত্রের দিকের তিন প্রপৌত্র রেখে মারা গেল। ভাদু এ ক্ষেত্রে তালিকায় ১-৩ নং ব্যবস্থানুযায়ী ১/৩ ভাদুর পুত্র অংশ পাবে। তার দুই পৌত্র একত্রে অংশ পিছু নিয়মানুসারে এবং অপর তিন প্রপৌত্র একই নিয়মে অবশিষ্ট অংশ পাবে। পূর্বেই বলা হয়েছে এভাবে স্থলবতী নিয়মে অংশ পাওয়াকে বলা হয় অংশপিছু উত্তরাধিকারী।
৬৷ যদু মৃতা কন্যার এক দৌহিত্র, অপর মৃতা কন্যার দিকের দুই দোহিত্র এবং পিতাকে রেখে মারা গেল। এক্ষেত্রে পিতা কিছু পাবে না, কারণ পিতার স্থান সপিন্ডদের তালিকার ৯ নং আর দৌহিত্রের স্থান ৮ নং। তিন দৌহিত্র মাথাপিছু নিয়মে প্রত্যেকে সমান অংশ পাবে। অথাত্ ১/৩ অংশ পাবে। এ ক্ষেত্রে স্থলবতী মতবাদের অংশপিছু নিয়ম প্রযোজ্য হবে না। কারণ প্রতিনিধিত্ব মতবাদ শুধুমাত্র পুত্র, পৌত্র এবং প্রপৌত্র থাকলেই প্রযোজ্য হয়,অন্য কোন ক্ষেত্রে নয়।
৭৷ মধু ক ও খ দুই বিধবা এবং এবং বিধবা ক এর দিকে দুই পুত্র এবং অপর বিধবা খ এর দিকে তিন পুত্র রেখে মারা গেল। এই ক্ষেত্রে প্রত্যেক পুত্র অংশ পাবে এবং ১ঌ৩৭ সনের সম্পত্তিতে হিন্দুনারীর অধিকার সংক্রান্ত আইন বলে মধু দুই বিধবা অংশ পাবে এবং প্রয়োজনবোধে তারা পুত্রদের সাথে বন্টন দাবি করতে পারবে৷ মধুর বিধবাদের জীবনস্বত্ব হবে। এক বিধবা মারা গেলে তার অংশ উত্তরাজীবি সুত্রে অপর বিধবা পাবে এবং পরে সেও মারা গেলে উভয় বিধবার অংশ মধুর পাঁচ পুত্র সমান অংশে পাবে৷
উত্তরাধিকারীদের ক্রমানুসারি তালিকার বর্ণনায় দৃষ্টি দেয়া হলে পিতামহী অর্থাত্ ১৬ নম্বর পযন্ত বলা হয়েছে। পরবর্তী ক্রম নিম্নরুপ:
১৭। পিতৃব্য অর্থাত্ পিতার ভাই
১৮। পিতৃব্য পুত্র অর্থাত্ চাচার পুত্র
১ঌ। পিতৃব্যের পৌত্র অর্থাত্ চাচার নাতি
২০। পিসীর পুত্র অর্থাত্ ফুফুর পুত্র
২১। প্রপিতামহ অর্থাত্ দাদার পিতা
২২। প্রপিতামহী অর্থাত্ দাদার মাতা
২৩। পিতৃব্যের পিতা অর্থাত্ চাচার পিতা
২৪। পিতৃব্যের পিতার পুত্র অর্থাত্ চাচার পিতার পুত্র
২৫। পিতৃব্যের পৌত্র অর্থাত্ চাচার নাতি
২৬ । পিতামহের ভাগিনেয় অর্থাত্ দাদার বোনের ছেলে
২৭। পুতনির পুত্র অর্থাত্ পুত্রের কন্যার পুত্র
২৮। ভাইঝির পুত্র
২ঌ। ভাইপোর কন্যা
৩০। পিতৃব্যের কন্যার পুত্র -চাচার কন্যার পুত্র
৩১৷ পিতৃব্যের পিতার কন্যার পুত্র-চাচার পিতার কন্যার পুত্র
৩২৷ পিতৃব্যের পিতার পুত্রের কন্যার পুত্র-চাচার পুত্রের কন্যার পুত্র
৩৩৷ মাতামহ – নানা
৩৪। মামা
৩৫। মামার পুত্র
৩৬। মামার পৌত্র অর্থাত্ মামার নাতি
৩৭। মাসীর পুত্র অর্থাত্ খালার পুত্র
৩৮। প্রমাতামহ অর্থাত্ নানার পিতা
৩ঌ। প্রমাতামহের পুত্র অর্থাত্ নানার পিতার পুত্র
৪০। প্রমাতামহের পৌত্র অর্থাত্ নানার পিতার নাতি
৪১। প্রমাতামহের প্রপৌত্র অর্থাত্ নানার পিতার নাতির পুত্র
৪২। প্রমাতামহের কন্যার পুত্র অর্থাত্ নানার পিতার কন্যার পুত্র
৪৩। প্রমাতামহের পিতা অর্থাত্ নানার পিতার পিতা
৪৪৷ তার পুত্র
৪৫। তার নাতি
৪৬। তার নাতির পুত্র
৪৭। তার পুত্রের কন্যা
৪৮। মাতামহের পুত্রের কন্যার পুত্র অর্থাত্ মাতার পিতার পুত্রের কন্যার পুত্র
৪ঌ৷ উহার পৌত্রের কন্যার পুত্র অর্থাত্ তার পুত্রের পুত্রের কন্যার পুত্র
৫০। প্রমাতামহের পুত্রের কন্যার পুত্র অর্থাত্ মাতার পিতার পিতার পুত্রের কন্যার পুত্র
৫১। উহার পৌত্রের কন্যার পুত্র অর্থাত্ তাহার পুত্রের পুত্রের কন্যার পুত্র
৫২। প্র প্রমাতামহের পুত্রের কন্যার পুত্র অর্থাত্ মাতার পিতার পিতার পুত্রের কন্যার পুত্র
৫৩। উহার পৌত্রের কন্যার পুত্র অর্থাত্ তার পুত্রের পুত্রের কন্যার পুত্র