28 April, 2016
আপনার অধিকার প্রতিষ্ঠায় কখন আদালতে যাবেন?
বিলম্বের কারণে অনেকেই অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন না, কেননা আইনের সূত্র হচ্ছে ‘বিলম্ব ন্যায় বিচারকে প্রতিহত করে’। আইনের আরো একটি নিয়ম হচ্ছে ‘যে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট নয়, আইন তাকে সহায়তা করে না। আইন সচেতনতার এবং অবহেলার কারণে মানুষের অধিকার আদায় করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। নিষ্ঠুর তামাদি আইনের প্রবল বাধা আর অতিক্রম করা যায় না। কেননা সময় একবার অতিবাহিত হয়ে গেলে আর তা ফিরে পাওয়া যায় না। মামলা মোকদ্দমার আধিক্য কমাতে এবং নাগরিকদেরকে নিজ নিজ অধিকার প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট করতেই তামাদি আইনের জন্ম। এজন্য অনেকে বলে থাকেন তামাদি আইন জবর দখলকে সমর্থন করে, কারণ নির্দিষ্ট সময় কালের মধ্যে জবর দখলকারীর বিরুদ্ধে উচ্ছেদ মামলা না করলে সংশ্লিষ্ট জমিতে জবর দখলকারীর এক প্রকার শক্তিশালী বিরুদ্ধ স্বত্ব জন্ম নেয়। যার ফলে তাকে আর উচ্ছেদ করা যায় না। বৈধ মালিক তার মালিকানা স্বত্ব হারায়।সাধারণত কোন একটি বিষয়ে নালিশের উদ্ভব হলে অর্থাৎ কোন ব্যাপারে মামলা করার প্রয়োজন দেখা দিলে প্রশ্ন জাগে মামলাটি কখন করবো ? আবার অনেকে মনে করেন- ‘করবো এক সময়’ বলে বসে থাকেন। কিন্তু না, কখন মামলা দায়ের করতে হবে সে প্রশ্নের সমাধান দিয়েছে তামাদি আইন। আর যারা যারা মনে করেন যে, ‘করবো এক সময়’ তাদের সাবধান করেছে এ আইন। যে কোন সময়, আপনার খেয়াল খুশি মতো আপনি আপনার দাবির স্বপক্ষে মামলা দায়ের করতে পারেন না, সব কিছুর যেমন একটি নিয়ম আছে, আইন আছে, মামলা দায়েরের ক্ষেত্রেও সময়ের সেই নিয়ম বেঁধে দিয়েছে তামাদি আইন।তামাদি আইন মানুষকে সাবধান করেছে যে, একটি বিশেষ সময়-সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পর আর মামলা করা চলবেনা। দেশের প্রচলিত আইন এবং সরকার এটাই আশা করেন যে, প্রতিটি নাগরিক তাদের অধিকার সম্বন্ধে সদা জাগ্রত এবং সচেতন থাকবে। কেউ তাদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আইনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আদালতে বিচারপ্রার্থী হলে আদালত তার অধিকার প্রতিষ্ঠায় সর্বোতভাবে সাহায্য করবে। কিন্তু কেউ যদি নিজের অধিকার এর বিষয়ে উদাসীন থাকে এবং আইনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিকারের জন্য আদালতে উপস্থিত না হয়, তবে সেই রকম ব্যক্তিকে আইন আদালত সাহায্য করবে না। তামাদি আইন ধরেই নেয় যে, দাবি যার সত্য, সে তার দাবি আদায়ে তৎপর থাকবে।মামলা মোকদ্দমার সময়সীমা বিষয়ে কোন বাধা নিষেধ না থাকলে দীর্ঘদিন পরে আমাদের নানাভাবে মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকতো। বিষয়াদি নিয়ে সর্বদা চিন্তান্বিত থাকতে হতো। সে কারনে মানবিক শান্তি বিঘ্নিত হতো। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হেতু প্রয়োজনীয় সাক্ষী এবং নির্ভরযোগ্য সাক্ষ্যের অভাব হতো, ফলে বিচারকের পক্ষে কোন বিষয় সঠিকভাবে নিষ্পত্তি করা কঠিন হয়ে পড়তো। কোন সময় সীমা বাধা না থাকলে মামলা মোকদ্দমা কোন দিন শেষ হতো না। তামাদি আইনে ক্ষতিগ্র্রস্ত পক্ষকে মামলা আপিল, দরখাস্ত রিভিশন, রিভিউ নির্ধারিত সময় সীমার মধ্যে দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছে। নির্ধারিত সময় সীমার মধ্যে না করলে প্রতিপক্ষ আপত্তি উত্থাপন করুক বা না করুক তামাদি আইনের নির্ধারিত নিয়মে আদালত সেটা ডিসমিস করে দেবেন। কোন বিশেষ ক্ষেত্রে এই আইনের প্রয়োগ যত রূঢ়ই মনে হোক না কেন আদালতের এ আইনের বিধান মেনে চলতে হবে।এই আইনের বিধান অনুযায়ী অনুমোদনযোগ্য না হলে কোন প্রার্থীকে আদালত ন্যায় বিচারের খাতিরেও সময়সীমার ব্যাপারে কোন অনুকম্পা প্রদর্শন করতে পারেন না।
তামাদি আইনের বিভিন্ন ধরনের মামলা দায়েরের জন্য ভিন্ন ভিন্ন সময়সীমা নির্দিষ্ট করেছে।
ঋণের টাকা আদায়ের মামলা দায়েরের জন্য সময় নির্দিষ্ট করা হয়েছে তিন বছর
অর্থাৎ ঋণের টাকা আদায়ের জন্য আপনাকে তিন বছরের মধ্যে মামলা দায়ের করতে হবে। তিন বছর পার হয়ে গেলে ঋণের টাকার উপর আপনার দাবি আইনতঃ গ্রাহ্য হবে না। যদিও আপনার দাবি সত্য, কিন্তু সময় অতিক্রান্তের সাথে সাথে আপনার দাবির উপর তামাদি আইন বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
খাস দখলের মামলা কখন করবেন ?
আপনার নিজস্ব এক খণ্ড জমি থেকে কেউ অন্যায় ও বেআইনীভাবে আপনাকে বেদখল করে দিল। এখন আপনি এই অন্যায় বেদখলদারকে জমি থেকে সমূলে উচ্ছেদ করে আপনার খাস দখল ফিরে পাওয়ার জন্য কখন মামলা করবেন?
এই মামলাটি করতে হবে জমি থেকে আপনাকে বেদখল করে দেওয়ার তারিখ থেকে বার বছরের মধ্যে।
এরপর বলা যায় আপনার ২০ বছরের অর্জিত ব্যবহার সিদ্ধ অধিকারে কেউ যদি বাধা দান করে তবে আপনার ব্যবহার সিদ্ধ অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য বাধা দানের দিন থেকে ২ বছরের মধ্যে মামলা করতে হবে।
প্রিয়ামশন বা অগ্রক্রয়: প্রিয়ামশন বা অগ্রক্রয়ের ক্ষেত্রে তামাদির সময় গণনা শুরু হয় জমিটি বিক্রি হওয়ার পর রেজিস্ট্রি হওয়ার খবর শোনার পর থেকে।
কোন বিক্রিত জমির উপর প্রিয়ামশন মামলা করতে হলে জমিটি বিক্রি সম্পন্ন হলে রেজিস্ট্রি অফিসে বালাম বই এ রেজিস্ট্রি দলিল লিপিবদ্ধ হওয়ার পর থেকে ১২০ দিনের মধ্যে করতে হতো, বর্তমানে তা ১ মাস(৩০) দিনের মধ্যে করতে হবে।
ভুয়া বা জাল দলিল বা বিক্রি বাতিল করনের মামলা:
-কোন ব্যক্তি যদি কারো অজ্ঞাতসারে তার বিরুদ্ধে কোন ভূয়া বা জাল দলিল তৈরি করে এবং তা রেজিস্ট্রি করে গোপনে আদালত হতে কোন ডিক্রি হাসিল করে তবে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ সে ভুয়া বা জাল দলিল সম্পর্কে সর্বপ্রথম জানার পর থেকে তার বিরুদ্ধে তামাদিকাল গণনা শুরু হয়। ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে ভুয়া বা জাল দলিল বা ডিক্রির বিষয় জানার পর থেকে তিন বছরের মধ্যে সে দলিল বাতিল বা ডিক্রি রদের মামলা করতে হবে।
তবে তামাদি আইনের এ সকল শর্ত/ধারা কেবলমাত্র সিভিল কোর্ট বা দেওয়ানী মামলার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। দেওয়ানী মামলার ক্ষেত্রেই কেবল তামাদি আইন কড়া-কড়িভাবে বিধিনিষেধ দিয়েছে। ফৌজদারী মামলার ক্ষেত্রে তামাদি আইন মূলতঃ প্রযোজ্য নয়। তবে সাজাপ্রাপ্ত আসামীর সাজা কয়েক যুগ পার হলেও তা তামাদি হয়না। যখন গ্রেফতার হবে তখন থেকে তা কার্যকর এর সময় গণনা হবে।