27 May, 2016
দখলবলে মালিকানা স্বত্ব অর্জন
ধারা–২৬। সুখাধিকারসমূহ অর্জন
উপধারা-(১) যেইক্ষেত্রে কোনো দালানে আলো বা বাতাসের প্রবেশ ও ব্যবহার সুখাধিকার হিসাবে এবং অধিকার হিসাবে অব্যাহতভাবে এবং বিশ বসর যাবত্ শান্তিপূর্ণভাবে ভোগ করা হইয়াছে এবং যেইক্ষেত্রে কোনো পথ বা জলস্রোত অথবা কোনো পানির ব্যবহার অথবা অন্য যেই কোনো সুখাধিকার (ইতিবাচক, নেতিবাচক যাহাই হউক না কেন) কোনো ব্যক্তি সুখাধিকার ও অধিকার হিসাবে উহাতে স্বত্ব দাবি করিয়া অব্যাহত ভাবে এবং বিশ বসর যাবত্ শান্তিপূর্ণ ভাবে ও প্রকাশ্যে ভোগ করিয়াছে, সেইক্ষেত্রে অনুরূপ আলো-বাতাসের প্রবেশ ও ব্যবহার, পথ, জলস্রোত, পানির ব্যবহার অথবা অন্য কোনো সুখাধিকার নিরষ্কুশ ও অলংঘনীয় অধিকারে পরিণত হইবে।যদি কোনো মামলায় উক্তরূপ কোনো অধিকারের দাবির বিরোধিতা করা হয়, সেই মামলায় উক্ত উভয় ক্ষেত্রেই বিশ বসর বলিতে মামলা দায়েরের তারিখের অব্যবহতি পূর্ববর্তী দুই বসরের মধ্যে সমাপ্ত বিশ বসর বুঝাইবে।
উপধারা-(২) যেই সম্পত্তির উপর (১) উপধারা অনুসারে অধিকার দাবি করা হয়, তাহা যদি সরকারের সম্পত্তি হয়, তবে উক্ত উপধারায় ‘বিশ
বসর’ কথাগুলির স্থলে ‘ষাট বসর’ কথাগুলি প্রতিস্থাপিত হইবে।
ব্যাখ্যা : এই ধারার অর্থানুসারে কোনো কিছুই ব্যাহত হইবে না যদি দাবিদার ব্যতীত অন্য কোনো লোকের কার্য দ্বারা বাধার ফলে দখল বা ভোগ প্রকৃত বিরতি না হয় এবং যদি উক্ত বাধা মানিয়া না লওয়া হয় অথবা উহাতে মৌন সম্মতি প্রকাশ না করা হয় এবং তাহা দাবিদারের গোচরীভুত হইবার পর এক বসর অতিবাহিত হয়।
উদাহরণ :
(ক) পথ চলার অধিকারে বাধা প্রদানের জন্য ১৯১১ সালে একটা মামলা দায়ের করা হয়। বিবাদী বাধা প্রদানের কথা স্বীকার করে। কিন্তু পথ চলার অধিকারের প্রতি অস্বীকৃতি জানায়। বাদী প্রমাণ করিয়া থাকে যে, সে এই অধিকার ১৮৯০ সালের ১লা জানুয়ারি হইতে ১৯১০ সালের ১লা জানুয়ারি পর্যন্ত অব্যাহতভাবে উহাতে সুখাধিকার হিসাবে স্বত্ব দাবি করিয়া শান্তিপূর্ণভাবে ও প্রকাশ্যে ভোগ করিয়াছে। বাদী স্বীয় অনুকূলে রায় পাইবার অধিকারী।
(খ) অনুরূপ এক মামলায় বাদী দাবি করিয়া থাকে যে, সে এই অধিকার শান্তিপূর্ণভাবে ও প্রকাশ্যে বিশ বসর যাবত ভোগ করিয়াছে, বিবাদী প্রমাণ করিয়া থকে যে, ঐ বিশ বসরের মধ্যে বাদী একবার এই অধিকার ভোগের জন্য তাহার অনুমতি প্রার্থণা করিয়াছিল। মামলাটি খারিজ হইয়া যাইবে।
ধারা–২৭। পার্শ্ববর্তী এলাকার ভাবী উত্তরাধিকারীর পক্ষে সময়ের অব্যাহতি
যেইক্ষেত্রে কোনো জমি বা পানির সুখাধিকার কোনো জীবনস্বত্ব বা তিন বসরের অধিককালের মঞ্জুরকৃত স্বত্ববলে প্রাপ্ত হইয়াছে, বা ভোগ করা গিয়াছে, সেইক্ষেত্রে উক্ত স্বত্ব বাতিল হইবার পরবর্তী তিন বসরের মধ্যে যদি স্বত্ব লাভের অধিকারী ব্যক্তি অনুরূপ জমি বা পানি সম্পর্কে উক্তরূপ দাবির বিরোধিতা করে, তবে বিশ বত্সর গণনা করিবার সময় উপরোক্ত জীবনস্বত্ব বা মঞ্জুরী বহাল থাকাকালে সুখাধিকার যতদিন ভোগ করা গিয়াছে, বিশ বসর হইতে সেই সময় বাদ দিয়া গণনা করিতে হইবে ।
উদাহরণ :
ক-একটা মামলা দায়ের করিয়া খ-এর জমির উপর তাহার পথ চলার অধিকার ঘোষণা প্রার্থণা করে। ক প্রমাণ করিয়া থকে যে, সে পঁচিশ বসর যাবত এই অধিকার ভোগ করিয়াছে । খ দেখায় যে, উক্ত পঁচিশ বসরের মধ্যে দশ বসর উক্ত জমির উপর গ-নাম্নী এক হিন্দু বিধবার জীবনস্বত্ব বিদ্যমান ছিল এবং গ-এর মৃত্যুর পর খ উক্ত জমিতে স্বত্বলাভ করিয়া থাকে এবং গ-এর মৃত্যুর পর দুই বসরের মধ্যে খ ক-এর দাবির বিরোধিতা করিয়াছে । এই ক্ষেত্রে মামলাটি খারিজ হইয়া যাইবে । কারণ এই ধারার বিধানাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে ক মাত্র পনরো বসর অধিকার ভোগ করিয়াছে বলিয়া প্রমাণ করিয়াছে ।
ধারা–২৮। সম্পত্তির অধিকার বিলুপ্তি
কোনো সম্পত্তি দখল প্রাপ্তির জন্য মামলা দায়ের করিবার ব্যাপারে এই আইনে যেই মেয়াদ নির্ধারিত করিয়া দেওয়া হইয়াছে, তাহা উত্তীর্ণ হইবার পর সেই সম্পত্তিতে বাদীর অধিকার বিলুপ্ত হইয়া যাইবে ।
বিরুদ্ধ-দখলের মাধ্যমে একটা সম্পত্তি বৈধ স্বত্ব অর্জিত হইতে পারে। বিরুদ্ধ উপাদানগুলি হইলো :
(১) বাদীর বৈধ স্বত্ব ও অধিকারের উপর ‘বিরুদ্ধ-দখল’ প্রতিষ্ঠিত হইতে হইবে ।
(২) বাদীর সম্পত্তিটি অবশ্যই বিবাদীর দখলে থাকিতে হইবে ।
(৩) জবর-দখলজনিত কারণে বেদখল সংঘটিত হইতে হইবে । বেআইনীভাবে দখল বা জবর-দখল সংঘটিত না হইলে, ‘বিরুদ্ধ দখল’ প্রতিষ্ঠিত হইবে না ।
(৪) বিবাদীর জবর-দখল অবশ্য বাদীর প্রতিকূলে হইতে হইবে।
(৫) জবর-দখল হইবার সময় হইতে বারো বত্সরের মধ্যে বাদীকে অবশ্যই দখল পুনরুদ্ধার করিবার জন্য মামলা রুজু করিতে হইবে ।
(৬) বেদখল হইবার সময় হইতে বরো বত্সরের মধ্যে ঐ সম্পত্তিতে দখল পুনরুদ্ধারের জন্য মামলা না করিলে বিবাদীর অনুকূলে স্বত্ব অর্জিত হইবে ।
(৭) বিবাদীকে জবর-দখল পূর্বক সম্পত্তিটি দখলে রাখিবার চেষ্টায় লিপ্ত থাকিতে হইবে ।
(৮) সম্পত্তির দখল নিরবচ্ছিন্ন, প্রকাশ্যে এবং প্রকৃত মালিকসহ অন্যান্য সকলের বিরুদ্ধে অভিহিত করা হইয়া থাকে ।
(৯) ‘বিরুদ্ধ দখল’ অবশ্যই প্রকৃত মালিকের জ্ঞাতসারে থাকিতে হইবে ।
(১০) বাদীর স্বত্ব অস্বীকারে জবর-দখলকারীকে নিজের দাবিতে জমিতে দখল থাকিতে হইবে ।
(১১) আইনসম্মতভাবে প্রথম হইতে বৈধ-দখল আরম্ভ হইলে, পরে কোনো অবস্থাতেই বিরুদ্ধ দখলের দাবি উত্থাপন করা যাইবে না।
(১২) বিরুদ্ধ-দখলের কারণে, বিবাদীর স্বত্বের উদ্ভব হইবে এবং বাদীর স্বত্ব নিঃশেষ হইবে।
তামাদি আইনের দখল উদ্ধারের জন্য তামাদির মেয়াদ প্রথম তফসিলে নির্ধারিত রহিয়াছে । এই নির্ধারিত সময় পার হইয়া গেলে ঐ সম্পত্তির উপর দাবীকারীর স্বত্ব লোপ পায়।
কোনো ব্যক্তি যদি অন্যের সম্পত্তি প্রকাশ্যভাবে মালিকের গোচরে ১২ বত্সরের উর্ধ্বকাল দখল করিয়া থাকে, তবে সেইক্ষেত্রে জবরদখলকারীর স্বত্ব পাকা হয় এবং আসল মালিকের স্বত্ব নষ্ট হয়।
সংরক্ষণ ও বাতিল
ধারা–২৯। সংরক্ষণ
(১) এই আইনের কোনো বিধান ১৮৭২ সালের চুক্তি আইনের (১৮৭২ সালের ৯নং আইনে) ২৫ ধারাকে প্রভাবিত করিবে না।
(২) যেইক্ষেত্রে কোনো বিশেষ আইনে কোনো মামলা, আপিল বা দরখাস্তের জন্য এই আইনের প্রথম তফসিলে নির্ধারিত মেয়াদ অপেক্ষা ভিন্নতর মেয়াদের বিধান রহিয়াছে, সেইক্ষেত্রে এই আইনের ৩ ধারার বিধানসমূহ এইরূপভাবে প্রযোজ্য হইবে, যেন উক্ত ভিন্নতর মেয়াদ এই আইনের বিধান অনুসারে কোনো মামলা, আপিলে বা দরখাস্তের তামাদির মেয়াদ গণনার উদ্দেশ্যে-
(ক) এই আইনের ৪ ধারা, ৯ হইতে ১৮ ধারা ও ২২ ধারার বিধানসমূহ সেই পরিমাণে প্রযোজ্য হইবে, যেই পরিমাণ উহা উক্ত বিশেষ আইনের ষ্পষ্ট বহির্ভূত নহে; এবং
(খ) এই আইনের অবশিষ্ট বিধানসমূহ প্রযোজ্য হইবে না।
(৩) এই আইনের কোনো বিধান বিবাহ-বিচ্ছেদ আইন (১৮৬৯ সালের ৪ নং আইন) অনুসারে আনীত মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে না।
(৪) যেই সকল এলাকায় ১৮৮২ সালের সুখাধিকার আইনের আওতা আপাতত সম্প্রসারিত করা হইবে, সেই সকল এলাকা হইতে উদ্ভূত মামলার ক্ষেত্রে আইনের ২৬ ও ২৭ ধারা এবং ২ ধারায় বর্ণিত ‘সুখাধিকার’ এবং সংজ্ঞা প্রযোজ্য হইবে না
এই কনটেন্টটিতে ১৯০৮ সালের তামাদি আইনের ধারাসমূহের বর্ণনা রয়েছে।