মামলায় বাদী-বিবাদী কিংবা সাক্ষী হাজির না হলে
ধরুন আপনি কারো বিরুদ্ধে একটি মামলা ঠুকে দিলেন। মামলা গ্রহণের পর আদালত পক্ষগণ এবং সাক্ষীদের শুনানির জন্য সমন পাঠাবেন। এ সমন পাওয়ার পর যদি বাদী-বিবাদী কিংবা সাক্ষীদের কেউ অনুপস্থিত থাকেন, সে ক্ষেত্রে মামলার কী হবে? মামলা কি এ অবস্থায় যথারীতি চলতে থাকবে নাকি মামলার পক্ষগণের অনুপস্থিতির কারণে স্থগিত হয়ে যাবে, নাকি মামলাই বাতিল হয়ে যাবে? আমাদের দেওয়ানি ও ফৌজদারি কার্যবিধিতে এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট বিধান বলে দেয়া আছে। পক্ষ বা সাক্ষীদের অনুপস্থিতির কারণে মামলা কখনো কখনো একতরফা চলবে কখনোবা মামলা খারিজ হয়ে যাবে। দেওয়ানি মামলার কোনো পক্ষ মামলার কার্যক্রমে হাজির না হলে কী হবে এবং কী কী প্রতিকার পাওয়া যাবে, তা দেওয়ানি কার্যবিধির ৯ নম্বর আদেশে বলা হয়েছে। ৯ নম্বর আদেশের ৩ নম্বর নিয়ম অনুসারে, মামলার শুনানির জন্য ডাক পড়লে কোনো পক্ষই যদি হাজির না হয় তবে মামলা খারিজ হয়ে যাবে। তবে কোনো পক্ষই হাজির না হওয়ায় মামলা খারিজ হলে দেওয়ানি কার্যবিধির ৯ নম্বর আদেশের ৪ নম্বর নিয়ম অনুসারে আবেদন দাখিল করে মামলা পুনর্জীবিত করার প্রার্থনা করা যাবে। এ ক্ষেত্রে উপযুক্ত কারণ থাকলে আদালত মামলা পুনর্জীবিত করবেন।
৬ নম্বর নিয়ম অনুসারে শুধু বাদী হাজির থাকলে এবং সমন যথারীতি জারি সত্ত্বেও বিবাদী হাজির না হলে মামলায় একতরফ বিচার হবে। অর্থাৎ বিবাদীর অনুপস্থিতিতেই মামলা পরিচালনা করবেন বিচারক।
৮ নম্বর নিয়ম অনুসারে যখন কেবল বাদী হাজির থাকেন এবং বিবাদি যদি এর আগে তার দেয়া লিখিত জবাবে বাদীর দাবি মেনে না নেন, সে ক্ষেত্রে মামলা খারিজ হবে।
৮ নম্বর নিয়ম অনুসারে মামলা খারিজ হলে অর্থাৎ বাদী অনুপস্থিত ছিলেন তবে বিবাদী হাজির ছিল এমন ক্ষেত্রে ৯ নম্বর আদেশের ৯ নম্বর নিয়ম অনুসারে মামলা পুনর্জীবিত করা যেতে পারে। বিবাদীর অনুপস্থিতিতে যদি একতরফা ডিক্রি প্রদান করা হয়, তাহলে তা বাতিল করার জন্য ১৩ নম্বর নিয়মে বিবাদী পক্ষ আবেদন করতে পারেন এবং উপযুক্ত কারণ থাকলে আদালত তা মঞ্জুরও করতে পারেন।
দেওয়ানি কার্যবিধির ১৭ নম্বর আদেশের ২ নম্বর নিয়মে বলা হয়েছে, শুনানি মুলতবি রাখার পরের তারিখে যদি পক্ষগণ বা কোনো পক্ষ হাজির না হয়, সে ক্ষেত্রে আদালত ৯ নম্বর আদেশের নিয়ম অনুসারে কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন।
কোনো ব্যক্তিকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেয়া সত্ত্বেও ওই ব্যক্তি হাজির না হলে সে সম্পর্কে বিধান ১৬ নম্বর আদেশের ১০ নম্বর নিয়ম থেকে ১৬ নম্বর নিয়মে বলা হয়েছে। ওই আদেশের ১০ নম্বর নিয়ম অনুসারে, সাক্ষী ইচ্ছাকৃতভাবে হাজির না হলে তার প্রতি হুলিয়া এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জামিনসহ বা জামিন ছাড়া জারি হতে পারে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৩৯খ ধারা অনুসারে, আসামি হাজির না হলে সরকারি গেজেটে এবং দৈনিক কোনো সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে অনুপস্থিতিতেই বিচার করা যাবে।