17 August, 2016
মিথ্যা মামলায় কী করবেন?
আমাদের সমাজে মিথ্যা ও তুচ্ছ মামলা দায়েরের মাধ্যমে নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি করার ঘটনা নেহাত কম নয়। নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে প্রতিপক্ষকে প্রায়ই সামাজিক এবং আর্থিকভাবে হয়রানি করার ঘটনা ঘটাতে দেখা যায়। পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করেও এ ধরনের অভিযোগ দায়ের করা হয়। যেমন যৌতুক, ভরণপোষণ, খোরপোশ, তালাক প্রভৃতি বিষয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করে স্বামী-স্ত্রীর স্বাভাবিক সংসারজীবন বিপন্ন করে তোলা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রেমের বিয়েকে কেন্দ্র করে নারী অপহরণ, ধর্ষণসহ বিভিন্ন মামলা দায়ের করা হয়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ক্ষেত্রে অধিকাংশ মামলাই মিথ্যা ও হয়রানিমূলক উদ্দেশ্যে দায়ের করার ঘটনা ঘটে। কিন্তু মিথ্যা মামলার শিকার হলে আইন অনুযায়ী মামলা দায়েরকারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
মামলা চলার সময়ে যা করতে হবে
যদি মিথ্যা মামলার শিকার হয়েই যান কেউ, তাহলে আইন ও আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মামলাটি লড়ে যেতে হবে। যদি দলিলপত্র ও সাক্ষ্যপ্রমাণ ঠিক থাকে, তাহলে মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই মিলবে। মামলা থেকে পালিয়ে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। এতে আপনার অনুপস্থিতিতেই সাজা হয়ে যেতে পারে। তবে ফৌজদারি মামলায় জামিনের বিষয় জড়িত থাকে। জামিন বিষয়ে কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হতে পারে। মিথ্যা মামলা হলে রেহাই মিলে। থানায় মামলা হলে তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে যথাযথ সত্যতাসহ যাবতীয় দলিল উপস্থাপন করতে হবে। পুলিশ ইচ্ছে করলে গ্রেপ্তার না করে মামলার বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষেÿআপনাকে নির্দোষ দেখিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দায়ের করতে পারে।
পুলিশ গ্রেপ্তার করে আদালতে চালান দিলে জামিনের আবেদন করতে হবে। পরবর্তী সময়ে অভিযোগ গঠনের দিন মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করতে হবে। নিম্ন আদালতে অব্যাহতি না পেলে পর্যায়ক্রমে উচ্চ আদালতের আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। যদি আদালতে সরাসরি মামলা হয়, তাহলেও আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে হবে এবং পরবর্তী সময়ে মামলার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। মামলা সাক্ষ্য পর্যায়ে গেলে উপযুক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে। যদিও মামলার অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ যিনি মামলা করেন তাঁর ওপর বর্তায়। অনেক সময় মিথ্যা মামলা হলে মামলাকারী মামলা ঠুকে দেওয়ার পর আর হাজির হন না। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি তারিখ যাওয়ার পর মামলা থেকে খালাস পাওয়ার জন্য আবেদন করার সুযোগ আইনে রয়েছে। মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হলে অবশ্যই মিথ্যা মামলা দায়েরকারীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা আপনি গ্রহণ করতে পারেন।
আছে শাস্তির বিধান
ফৌজদারি কার্যবিধির ২৫০ ধারায় মিথ্যা অভিযোগের শাস্তির বিধান রয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট যদি আসামিকে খালাস দেওয়ার সময় প্রমাণ পান যে মামলাটি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক, তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট বাদীকে কারণ দর্শানোর নোটিশসহ ক্ষতিপূরণের আদেশ দিতে পারেন। দণ্ডবিধির ১৯১ ও ১৯৩ ধারায় মিথ্যা সাক্ষ্যদানের শাস্তির জন্য সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ডের কথা উল্লেখ আছে। দণ্ডবিধির ২০৯ ধারামতে, মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করলে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। আবার ২১১ ধারায় মিথ্যা ফৌজদারি মামলা দায়ের করার শাস্তির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে কোনো অভিযোগ দায়ের করলে অথবা কোনো অপরাধ সংঘটিত করেছে মর্মে মিথ্যা মামলা দায়ের করলে মামলা দায়েরকারীকে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করারও বিধান রয়েছে। তবে অভিযোগের বিষয় যদি এমন হয় যে যার কারণে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন বা সাত বছরের ওপর সাজা হওয়ার আশঙ্কা ছিল, তাহলে দায়ী অভিযোগকারীর সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর ১৭ ধারায়ও মিথ্যা মামলা দায়েরের শাস্তির কথা উল্লেখ আছে। এখানে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি কারও ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে এই আইনের অন্য কোনো ধারায় মামলা করার জন্য আইনানুগ কারণ নেই জেনেও মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন অথবা করান, তবে সেই অভিযোগকারী অনধিক সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।