4 October, 2016
উত্তরাধিকার সনদ কী?
উত্তরাধিকার সনদ হচ্ছে কোনো মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকার বা ওয়ারিশ কতজন এবং মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া অর্থ কে কতটুকু পাবেন, সে সম্পর্কে আদালত থেকে জারি করা একটি সনদ। এ সনদ শুধু মৃত ব্যক্তির অর্থসংক্রান্ত বিষয়ে দেয়া হয়ে থাকে, জমিজমা বিষয়ে জারি করা হয় না। সাধারণত কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকাররা অর্থ উত্তোলন করতে গেলে এই সনদের প্রয়োজন পড়ে। উত্তরাধিকার সনদে আদালত মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া অর্থ থেকে কে কতটুকু পাবেন, তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে দেয়।
কীভাবে আবেদন করতে হয়?
উত্তরাধিকার সনদ তুলতে হয় জেলা জজ আদালত থেকে। মৃত ব্যক্তির হিসাবের টাকা তোলার জন্য জেলা জজ আদালতে বা জেলা জজের মনোনীত অন্য কোনো আদালত থেকে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে এ সনদ তুলতে হয়। ঢাকায় তৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতকে এ সনদ-সংক্রান্ত বিষয় নিষ্পত্তির এখতিয়ার দেয়া হয়েছে। মৃত ব্যক্তির বৈধ উত্তরাধিকারীরা প্রত্যেকে কিংবা তাদের পক্ষে যিনি টাকা তুলবেন, তাকে আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে আরজি দাখিল করতে হবে। আবেদনের সঙ্গে হলফনামা দিতে হবে, যাতে উল্লেখ থাকবে।
১। আবেদনকারী মৃত ব্যক্তির সম্পর্কে কী হন;
২।মৃত ব্যক্তির এ টাকা কাউকে দান বা উইল করে যাননি;
৩। উইলের জন্য কোনো প্রবেট বা লেটার অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন দরখাস্ত দাখিল করে যাননি;
৪। আবেদনকারীকে অন্য উত্তরাধিকারীরা টাকা তোলার ক্ষমতা দান করেছেন। আরজিতে মৃত ব্যক্তির টাকার হিসাবের বিবরণ তফসিল আকারে দিতে হবে;
৫। সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা চেয়ারম্যান অফিস বা কমিশনারের কাছ থেকে মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর প্রত্যয়নপত্র জমা দিতে হবে। মৃত ব্যক্তিকে যে কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে, সে মর্মে একটি প্রত্যয়নপত্র;
৬। মৃত ব্যক্তি যদি কোনো হাসপাতাল বা ক্লিনিকে মৃত্যুবরণ করেন, তাহলে সেখান থেকে প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করে জমা দিতে হবে; ৭। মৃত ব্যক্তি কোন ব্যাংকে কত টাকা রেখে গেছেন, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে একটি সনদ (ব্যালান্স কনফারমেশন লেটার) ওঠাতে হবে এবং আদালতে জমা দিতে হবে;
৮। আদালতে আবেদন করার পর আদালত আবেদনকারীর জবানবন্দি নেবেন এবং সত্যতা যাচাই করবেন। পরবর্তী সময়ে আদালতে নির্দিষ্ট কোর্ট ফি জমা দেয়ার জন্য আদেশ দেবেন। কোর্ট ফি জমা দেয়া হলে পরে সনদ জারি করবেন।
কোর্ট ফি
আবেদনকারী ব্যাংক থেকে কত টাকা ওঠানোর জন্য আবেদন করছেন, তার ভিত্তিতে কোর্ট ফি নির্ধারিত হয়। দাবিকৃত অর্থের পরিমাণ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হলে কোনো কোর্ট ফি দিতে হয় না। কিন্তু ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত এক শতাংশ কোর্ট ফি দিতে হয়। আবার এক লাখ এক টাকা থেকে যে কোনো পরিমাণ অর্থের ওপর দুই শতাংশ কোর্ট ফি জমা দিতে হয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
উত্তরাধিকার সনদ পেতে দুই থেকে ছয় মাস সময় পর্যন্ত লাগতে পারে। তবে মৃত ব্যক্তি যদি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার জন্য ব্যাংকে কোনো নমিনি করে দিয়ে থাকেন, তাহলে ওই নমিনির টাকা তোলার জন্য উত্তরাধিকার সনদ দেয়ার প্রয়োজন হয় না, কিন্তু অনেক ব্যাংকে এ টাকা তোলার জন্য জমা দেয়া লাগতে পারে।
বি: দ্র: সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট থেকে রায় দেয়া হয়েছে যে, ব্যাংকে নমিনি নয় বরং উত্তরাধিকাররা অর্থ পাবে। এই রায়ের পর নমিনি কর্তৃক ব্যাংকের অর্থ উত্তোলনের আগের রীতি আর কাজ করবে না। উত্তরাধিকার সনদের প্রয়োজন পড়বে। উত্তরাধিকার সনদ উত্তোলনের জন্য আদালতে কোনো কারণে আবেদন খারিজ হলে জেলা জজ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে আপিলের সুযোগ রয়েছে। উত্তরাধিকার সনদ ব্যাংকে দাখিল করার পর ব্যাংক প্রত্যেক উত্তরাধিকারীর ব্যাংক একাউন্টে আদালতের নির্দেশ অনুসারে বণ্টনকৃত অর্থ জমা করবে। তবে সব উত্তরাধিকারী বা একাধিক উত্তরাধিকারী মিলে যদি কোনো একজন নির্দিষ্ট উত্তরাধিকারীকে পাওয়ার-অব-অ্যাটর্নি প্রদান করে, সে ক্ষেত্রে একজন উত্তরাধিকারী বরাবরও ব্যাংক অন্যদের অর্থ হস্তান্তর করতে পারে।