M/s. বালুরপাড় হোল্ডিংস (ব্লগ)

জমি সংক্রান্ত আইন ও সমস্যর সমাধান এখানেই

ওয়াকফ সম্পত্তি কি হস্তান্তর করা যায়?

ওয়াকফ সম্পত্তি কি হস্তান্তর করা যায়?

2 November, 2016

ওয়াকফ সম্পত্তি কি হস্তান্তর করা যায়?

ইসলামী আইনে ধর্মীয় উদ্দেশ্যে কিংবা মানবতার কল্যাণে কোনো সম্পত্তি খোদ আল্লাহর মালিকানায় সোপর্দ করার নাম ওয়াকফ। ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত থাকেন মুতাওয়ালি্ল। ওয়াকফকারী কিংবা সরকারের ওয়াকফ প্রশাসন মুতাওয়ালি্ল নিয়োগ করে থাকে। কখনো কখনো ওয়াকফ সম্পত্তি হস্তান্তরের প্রয়োজন পড়লে সেটি বিক্রি করা যায় কিনা, করা গেলে তার প্রক্রিয়া কী_ এসব নিয়ে নানা রকমের মতামত সাধারণ মানুষের মধ্যে উচ্চারিত হয়। ১৯৬২ সালের ওয়াকফ অধ্যাদেশ

মুতাওয়ালি্ল কে?
মুসলিম আইন অনুসারে, ওয়াকফ সম্পত্তির দেখাশোনা ও পরিচালনার ভার যার ওপর মৌখিকভাবে বা সাধনপত্রের মাধ্যমে ন্যস্ত করা হয়, তাকে ‘মুতাওয়ালি্ল’ বলে। ওয়াকফ সম্পত্তিতে মুতাওয়ালি্লর কোনো ব্যক্তিগত অধিকার থাকে না, তিনি কেবলই ওয়াকফকৃত সম্পত্তির দেখাশোনা ও পরিচালনার ক্ষমতাপ্রাপ্ত হন। ওয়াকফকারী নিজে অথবা তার পুত্রকন্যা ও বংশধরদের অথবা অন্য কোনো ব্যক্তিকে এমনকি কোনো নারীকে অথবা কোনো অমুসলিমকেও ওয়াকফ সম্পত্তির মুতাওয়ালি্ল নিয়োগ করতে পারেন। তবে যে ক্ষেত্রে মুতাওয়ালি্লকে ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করতে হয়, যা কোনো নারী ও অমুসলিমের পক্ষে পালন করা সম্ভব নয়, সে ক্ষেত্রে কোনো নারী বা অমুসলিম মুতাওয়ালি্ল হতে পারবেন না। ওয়াকফ অধ্যাদেশ অনুসারে, মুতাওয়ালি্ল অর্থ মৌখিকভাবে অথবা ওয়াকফ সৃষ্টিকারী কোনো দালিল বা দস্তাবেজের অধীনে অথবা কোনো যোগ্য কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কোনো ওয়াকফের মুতাওয়ালি্ল হিসেবে নিযুক্ত কোনো ব্যক্তি এবং অনুরূপ কোনো ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা বা প্রশাসন সাময়িকভাবে পরিচালনাকারী যে কোনো ব্যক্তি বা কমিটিকে বোঝাবে। ওয়াকফ সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বা প্রশাসনের জন্য ১৯০৮ সালের দেওয়ানি কার্যবিধির বিধানাবলি কিংবা ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৫ কিংবা ১৪৬ ধারা অনুসারে নিযুক্ত রিসিভার অথবা আপাতবলবৎ কোনো আইনের বিধানাবলি অনুসারে কোনো ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনাকারী অভিন্ন ব্যবস্থাপক ওই অধ্যাদেশের অধীনে মুতাওয়ালি্ল বলে গণ্য হবেন। কৃষি সম্পত্তির ক্ষেত্রে তিন বছর এবং কৃষিভূমি নয় এমন সম্পত্তির ক্ষেত্রে এক বছরের বেশি সময় পর্যন্ত ওয়াকফ সম্পত্তি ইজারা দেয়ার ক্ষমতা মুতাওয়ালি্লর নেই। ওয়াকফের প্রতিষ্ঠাতা কর্তৃক পারিশ্রমিকের ব্যবস্থা করা না হলে আদালত মুতাওয়ালি্লর পারিশ্রমিক নির্ধারণ করতে পারেন। ওয়াকফ সম্পত্তি, মুতাওয়ালি্লর অধিকার ও দায়িত্ব ওয়াকফ অধ্যাদেশের বিধান অনুসারে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়।

ওয়াকফ সম্পত্তি কি বিক্রি বা হস্তান্তর করা যায়?
ওয়াকফ অধ্যাদেশের ৩৩ ধারা অনুসারে, ওয়াকফের উন্নতি সাধনের উদ্দেশ্যে কিংবা ওয়াকফের কল্যাণার্থে ওয়াকফ সম্পত্তির যে কোনো অংশ হস্তান্তর করা যেতে পারে। বিদ্যমান কোনো আইন, ওয়াকফ দলিল বা কোনো চুক্তিতে এ ধরনের হস্তান্তর নিষিদ্ধ হলেও ওয়াকফ সম্পত্তির স্বার্থে সম্পত্তির কিছু অংশ বিক্রি করা যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে সতর্কতার বিষয় হলো_ এ ধরনের বিক্রয়ের উদ্যোগ কেবল ওয়াকফ প্রশাসক সরকারের পূর্ব অনুমোদন সাপেক্ষে গ্রহণ করতে পারেন। ওয়াকফ প্রশাসক ছাড়া মুতাওয়ালি্ল কিংবা স্থানীয় ওয়াকফ সম্পত্তির কমিটি এ ধরনের বেচাবিক্রি করতে পারে না।


প্রশাসক কি একতরফাভাবে অনুমতি দিতে পারেন?
না। কোনো ওয়াকফ সম্পত্তি বিক্রি করতে হলে ওয়াকফ প্রশাসক নিজ থেকে তার অনুমতি দিতে পারেন না। ৮ এমএলআর পৃষ্ঠা ২০৫-এ লেখা আছে_ ওয়াকফ প্রশাসকের অনুমতিক্রমে ওয়াকফ সম্পত্তি হস্তান্তর করা যাবে না। কারণ এতে যিনি ওয়াকফ করবেন তার উদ্দেশ্য নস্যাৎ হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ওয়াকফ সম্পত্তি হস্তান্তর, উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণকল্পে বিশেষ বিধান হয়েছে। এ আইন পাস হওয়ার পর ওয়াকফ প্রশাসক একা একা বিক্রির অনুমতি দিতে পারেন না। হস্তান্তরের উদ্দেশ্যে বিশেষ কমিটি গঠন করতে হবে

১। ওয়াকফ প্রশাসক যিনি পদাধিকার বলে সভাপতি হবেন।

২।সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকার অধ্যক্ষ বা তার মনোনীত ওই মাদরাসার একজন অধ্যাপক।

৩। গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী কর্তৃক মনোনীত একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বা নির্বাহী প্রকৌশলী।

৪। মহাপরিদর্শক নিবন্ধন কিংবা তার মনোনীত একজন প্রতিনিধি।

৫। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক উপসচিব পদমর্যাদার দুইজন কর্মকর্তা।

৬। আইন ও বিচার বিভাগ কর্তৃক মনোনীত উপসচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা।

৭। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত উপসচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা।

৮।ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত একজন কর্মকর্তা।

১০। উপধারা (২) অনুসারে নির্বাচিত তিনজন মোতাওয়ালি্ল।

১১।বাংলাদেশ মোতাওয়ালি্ল সমিতির একজন প্রতিনিধি।

১২। ওয়াকফ প্রশাসক কর্তৃক মনোনীত তার কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা, যিনি কমিটির সদস্যসচিব হবেন।
সাব-রেজিস্ট্রার ওয়াকফ সম্পত্তি রেজিস্ট্রি করবেন না কমিটি কর্তৃক অনুমোদন দেয়া না হলে। করলে তিনি ফৌজদারিতে সোপর্দ হবেন।

ওয়াকফ সম্পত্তি বিক্রয়ে মুতাওয়ালি্লর ভূমিকা
আগেই বলা হয়েছে যে, ওয়াকফ সম্পত্তি বিক্রি করার ব্যাপারে মুতাওয়ালি্লর কোনো ক্ষমতা নেই। এটি ওয়াকফ প্রশাসকের কাজ। ওয়াকফ প্রশাসকও সরকারের অনুমতি ছাড়া এ ধরনের বিক্রি করতে পারে না। কোনো ওয়াকফকৃত সম্পত্তি আইন মোতাবেক বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া হলে সেই সম্পত্তি কোনোক্রমেই মুতাওয়ালি্ল ক্রয় করতে পারবেন না। কোনো মুতাওয়ালি্ল ওয়াকফ সম্পত্তি ক্রয় করলে কাজটি দ-নীয় অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত হবে। ওয়াকফ অধ্যাদেশের ৬২ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো মুতাওয়ালি্ল ইচ্ছাকৃতভাবে এবং অসদুপায়ে কোনো ওয়াকফ সম্পত্তি খাজনা, অভিকর অথবা করের বকেয়ার কারণে বিক্রি করতে অনুমতি দেন এবং এরপর ওই সম্পত্তি তার নিজের নামে, অথবা অন্য কারো নামে ক্রয় করেন, তবে মুতাওয়ালি্লর এ ধরনের ক্রয় করাকে ‘অবৈধ কাজ এবং বিশ্বাসভঙ্গ বলে গণ্য করা হবে এবং ওই সম্পত্তি ওয়াকফে প্রত্যার্পণ করতে অথবা নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে ওই সম্পত্তির জন্য পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দান করতে প্রশাসক মুতাওয়ালি্লকে নির্দেশ দেবেন ।
বিঃদ্রঃ প্রশাসকের পূর্ব অনুমোদন ছাড়া মোতাওয়ালি্ল কর্তৃক ওয়াকফের কোনো স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয়, দান, বন্ধক, বিনিময় বা হস্তান্তর বৈধ হবে না। প্রশাসকও এমন অনুমোদন দিতে পারেন না যা আইনসম্মত নয়। মোতাওয়ালি্ল যদি ওয়াক্ফ সম্পত্তি অবৈধভাবে হস্তান্তর করেন তাহলে প্রশাসক দেওয়ানি আদালতের মাধ্যমে তা বাতিল ঘোষণা করতে পারেন। আবার মুতাওয়ালি্লকে না জানিয়ে যদি তৃতীয় কেউ ওয়াকফকৃত সম্পত্তি হস্তান্তর করেন,  মুতাওয়ালি্লও দেওয়ানি আদালতে মামলা দায়ের করে সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নিতে পারেন।

আপনিকি ঢাকায় প্লট/ফ্ল্যাট/জমি ক্রয়ের কথা ভাবছেন? আপনার পছন্দের প্লট/ফ্ল্যাট/জমিটি আমাদের কাছেই আছে।

2Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *