M/s. বালুরপাড় হোল্ডিংস (ব্লগ)

জমি সংক্রান্ত আইন ও সমস্যর সমাধান এখানেই

মুতাওয়াল্লিকে অপসারণ করার আইনসম্মত পদ্ধতি

মুতাওয়াল্লিকে অপসারণ করার আইনসম্মত পদ্ধতি

মুসলিম আইন অনুসারে, ওয়াকফ সম্পত্তির দেখাশোনা ও পরিচালনার ভার যার ওপর মৌখিকভাবে বা সাধনপত্রের মাধ্যমে ন্যস্ত করা হয় তাকে ‘মুতাওয়াল্লি বলে। ওয়াকফকারীর মৃত্যুর পর অনেক সময় কায়েমি স্বার্থবাদীরা ওয়াকফকৃত সম্পত্তি দখল করতে মুতাওয়াল্লিকে হাত করতে চায়। মুতাওয়াল্লি এ ধরনের প্রস্তাবে সাড়া না দিলে প্রভাবশালীরা তাকে নানাভাবে হেনস্তা করার চেষ্টা করে এমনকি অপসারণের হুমকি পর্যন্ত দিয়ে থাকে। কিন্তু চাইলেই কি মুতাওয়াল্লিকে অপসারণ করা যায়?

শুরুতেই জানা যাক, মুতাওয়ালি্ আসলে কে?

মুসলিম আইন অনুসারে, ওয়াকফ সম্পত্তির দেখাশোনা ও পরিচালনার ভার যার ওপর মৌখিকভাবে বা সাধনপত্রের মাধ্যমে ন্যস্ত করা হয়, তাকে ‘মুতাওয়াল্লি বলে। ওয়াকফ সম্পত্তিতে মুতাওয়াল্লির কোনো ব্যক্তিগত অধিকার থাকে না, তিনি কেবলই ওয়াকফকৃত সম্পত্তির দেখাশোনা ও পরিচালনার ক্ষমতাপ্রাপ্ত হন। ওয়াকফকারী নিজে অথবা তার পুত্রকন্যা ও বংশধরদের অথবা অন্য কোনো ব্যক্তিকে এমনকি কোনো নারীকে অথবা কোনো অমুসলিমকেও ওয়াকফ সম্পত্তির মুতাওয়াল্লি নিয়োগ করতে পারেন। তবে যে ক্ষেত্রে মুতাওয়াল্লিকে ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করতে হয়, যা কোনো নারী ও অমুসলিমের পক্ষে পালন করা সম্ভব নয়, সে ক্ষেত্রে কোনো নারী বা অমুসলিম মুতাওয়ালি্ল হতে পারবেন না। ওয়াকফ অধ্যাদেশ অনুসারে, মুতাওয়াল্লি অর্থ মৌখিকভাবে অথবা ওয়াকফ সৃষ্টিকারী কোনো দালিল বা দস্তাবেজের অধীনে অথবা কোনো যোগ্য কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কোনো ওয়াকফের মুতাওয়াল্লি হিসেবে নিযুক্ত কোনো ব্যক্তি এবং অনুরূপ কোনো ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা বা প্রশাসন সাময়িকভাবে পরিচালনাকারী যে কোনো ব্যক্তি বা কমিটিকে বোঝাবে। ওয়াকফ সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বা প্রশাসনের জন্য ১৯০৮ সালের দেওয়ানি কার্যবিধির বিধানাবলি কিংবা ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৫ কিংবা ১৪৬ ধারা অনুসারে নিযুক্ত রিসিভার অথবা আপাতবলবৎ কোনো আইনের বিধানাবলি অনুসারে কোনো ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনাকারী অভিন্ন ব্যবস্থাপক ওই অধ্যাদেশের অধীনে মুতাওয়াল্লি বলে গণ্য হবেন। কৃষি সম্পত্তির ক্ষেত্রে তিন বছর এবং কৃষিভূমি নয় এমন সম্পত্তির ক্ষেত্রে এক বছরের বেশি সময় পর্যন্ত ওয়াকফ সম্পত্তি ইজারা দেয়ার ক্ষমতা মুতাওয়াল্লির নেই। ওয়াকফের প্রতিষ্ঠাতা কর্তৃক পারিশ্রমিকের ব্যবস্থা করা না হলে আদালত মুতাওয়াল্লির পারিশ্রমিক নির্ধারণ করতে পারেন। ওয়াকফ সম্পত্তি, মুতাওয়াল্লির অধিকার ও দায়িত্ব ওয়াকফ অধ্যাদেশের বিধান অনুসারে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়।
ওয়াকফ অধ্যাদেশ ১৯৬১-এর ধারা ২(৬) অনুসারে, ‘মুতাওয়াল্লি’ বলতে যে ব্যক্তি মৌখিকভাবে অথবা যে দলিল কিংবা সাধনপত্র মোতাবেক ওয়াকফ সৃষ্টি করা হয়েছে, তার মাধ্যমে নিযুক্ত হয়েছেন অথবা কোনো ক্ষমতাবান কর্তৃপক্ষ মুতাওয়াল্লি হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন তাকেও বোঝাবে। যে ব্যক্তি বা কমিটি বর্তমানে কোনো ওয়াকফ সম্পর্কিত ব্যবস্থাপনা অথবা প্রশাসনিক কর্মকা- সম্পাদন করছেন, তাদেরও ‘মুতাওয়াল্লি’ বলা হবে।


সুতরাং এই আইনানুসারে বোঝা যায় সাধারণত দুভাবে মুতাওয়াল্লি নিযুক্ত হতে পারেন। প্রথমত ওয়াকফকারীর ইচ্ছা অনুসারে, দ্বিতীয়ত অন্য কোনো ক্ষমতাবান কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে। ওয়াকফকারী তার ওয়াকফ দলিলে লিখিতভাবে মুতাওয়াল্লির নাম উল্লেখ করে তাকে এই পদে নিযুক্ত করে দিয়ে যেতে পারেন। লিখিত দলিল ছাড়াও কেবল মৌখিকভাবেও ওয়াকফ যে কাউকে মুতাওয়ালি্ল হিসেবে নিযুক্ত করে যেতে পারেন। যেহেতু লিখিত দলিলের সাক্ষ্যগত মূল্য অনেক বেশি, সে কারণে মুতাওয়াল্লির নিয়োগ লিখিত দলিলের মাধ্যমে হওয়াই ভালো।
মুতাওয়াল্লির অপসারণ
ওয়াকফ অধ্যাদেশের ৩২ ধারা অনুসারে বেশ কিছু ক্ষেত্রে একজন মুতাওয়াল্লিকে অপসারণ করা যায়। প্রশাসক নিজের ইচ্ছায়, অথবা যে কোনো ব্যক্তির আবেদনের ভিত্তিতে একজন মুতাওয়াল্লিকে বেশকিছু কারণে অপসারণ করতে পারেন। যেমন :

(১) বিশ্বাস ভঙ্গ করে কিংবা অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে কিংবা অবৈধ কার্যকলাপের মাধ্যমে অথবা অন্যায়ভাবে ওয়াকফ সম্পত্তি আত্মসাৎ? করলে;

(২) মুতাওয়াল্লির কোনো কাজের কারণে ওয়াকফ সম্পত্তির কোনো ক্ষতিসাধন হলে,

(৩) ওয়াকফ অধ্যাদেশের অধীনে মুতাওয়াল্লি একাধিকবার দ-প্রাপ্ত হয়ে থাকলে, অথবা

(৪) যদি বর্তমানের মুতাওয়াল্লি অনুপযুক্ত, অযোগ্য, অমনোযোগী অথবা অন্য প্রকারে অবাঞ্চিত বলে বিবেচিত হন।
তবে মুতাওয়াল্লি অপসারণের ক্ষেত্রে আইনে বেশকিছু শর্তও দেয়া আছে। যেমন

: কোনো মুতাওয়াল্লিকে এভাবে অপসারণ করার আদেশ দেয়ার আগে তাকে নিজের বক্তব্য রাখার সুযোগ দিতে হবে।

মুতাওয়াল্লি তার অপসারণ আদেশের বিরুদ্ধে তিন মাসের মধ্যে জেলা জজ আদালতে আপিল করতে পারবেন।

জেলা জজ কর্তৃক আপিলের আদেশের বিরুদ্ধে ওই আদেশের ৯০ দিনের মধ্যে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে পুনঃপরীক্ষা করা যাবে, এবং এই বিষয়ে হাইকোর্ট বিভাগের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে।
নতুন মুতাওয়াল্লির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর
কোনো মুতাওয়াল্লিকে অপসারণ করা হলে অথবা মুতাওয়াল্লি পদত্যাগ করলে এবং তার পদত্যাগ গৃহীত হলে, প্রশাসক তার জায়গায় নতুন মুতাওয়াল্লি নিয়োগ করতে পারবেন যার কাছে বিদায়ী মুতাওয়ালি্ল প্রশাসক কর্তৃক নির্ধারিত তারিখের মধ্যে ওয়াকফ সম্পত্তির দখল এবং ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত যাবতীয় দলিল হস্তান্তর করবেন।
বিদায়ী মুতাওয়াল্লি যদি ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা এবং সে সংক্রান্ত যাবতীয় দলিল পরবর্তী মুতাওয়াল্লিকে হস্তান্তর করতে অপারগ হন অথবা অস্বীকার করেন তবে পরবর্তী মুতাওয়ালি্ল অথবা প্রশাসক ডেপুটি-কমিশনারের কাছে আবেদন করতে পারেন। ডেপুটি কমিশনার বিদায়ী মুতাওয়াল্লিকে উচ্ছেদ করে ওয়াকফ সম্পত্তি এবং এর দলিল উত্তরবর্তী মুতাওয়াল্লিকে কিংবা প্রশাসককে হস্তান্তর করবেন।
মুতাওয়াল্লি যদি বিশ্বাস ভঙ্গ করেন, অথবা ওয়াকফ সম্পত্তির ক্ষতি সাধনমূলক কোনো কাজ করেন, তবে তাকে ওয়াকফ সম্পত্তির অথবা তার স্বত্বভোগীদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ৬৩ ধারা অনুসারে, যদি কোনো বিদায়ী মুতাওয়াল্লি ওয়াকফ সম্পর্কীয় ব্যবস্থাপনার হিসাবাদি, দলিলাদি, নথিপত্র ও ওয়াকফের নগদ অর্থবিষয়ক কাগজপত্র তার উত্তরবর্তী মুতাওয়ালি্লকে হস্তান্তর করতে অপারগ হন, অথবা অস্বীকার করেন এবং ওয়াকফ-জমিতে উৎ?পন্ন ফসলাদি এবং ওই সম্পত্তির দখল সমর্পণ না করেন, তবে তাকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানায় এবং অনাদায়ে ছয় মাস পর্যন্ত কারাদন্ডিত করা যেতে পারে।

আপনিকি ঢাকায় প্লট/ফ্ল্যাট/জমি ক্রয়ের কথা ভাবছেন? আপনার পছন্দের প্লট/ফ্ল্যাট/জমিটি আমাদের কাছেই আছে।

সরকার থেকে মুতাওয়াল্লি নিয়োগ
৪৩ ধারা অনুসারে, কোনো ওয়াকফ সম্পত্তিতে মুতাওয়াল্লি না থাকলে, অথবা প্রশাসকের মতানুসারে ওয়াকফ দলিলের শর্ত অনুযায়ী মুতাওয়াল্লি নিয়োগ সম্ভব না হলে অথবা মুতাওয়াল্লি পদের উত্তরাধিকারী একজন নাবালক পাগল অথবা কোনো আদালত কর্তৃক দেউলিয়া নির্মিত হয়ে থাকলে প্রশাসক এ ব্যাপারে উপযুক্ত মনে করলে ওয়াকফ সম্পত্তিতে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নোটিশ দিয়ে কোনো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একজন মুতাওয়াল্লি নিয়োগ করতে পারিবেন। কোনো ব্যক্তি এভাবে নিয়োগের কারণে সংক্ষুদ্ধ হলে নোটিশ প্রাপ্তির তিন মাসের মধ্যে জেলা জজের কাছে আপিল করতে পারবেন এবং জেলা জজের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে।
৪৪ ধারা অনুসারে, এই অধ্যাদেশ বা অন্য কোনো আইনে অথবা কোনো দলিল-দস্তাবেজে যে কোনো বিধান থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজন বিশেষে প্রশাসক ওয়াকফ সম্পত্তি এবং সংলগ্ন সম্পত্তির সুষ্ঠু পরিচালনা এবং ব্যবস্থাপনার জন্য নির্ধারিত শর্তে ও বেতনে একজন সরকারি মুতাওয়াল্লি নিয়োগ করতে পারবেন।
মুতাওয়াল্লি কোনোক্রমে ওয়াকফ সম্পত্তি কিনতে পারবেন না
৬২ ধারা অনুসারে, যদি কোনো মুতাওয়াল্লি ইচ্ছাকৃতভাবে এবং অসদুপায় অবলম্বন করে কোনো ওয়াকফ সম্পত্তি খাজনা, অভিকর অথবা করের বকেয়া পরিশোধের উদ্দেশ্যে বিক্রি করতে অনুমতি দেন এবং এরপর সেই সম্পত্তি তার নিজের নামে অথবা অন্যের নামে ক্রয় করেন, সে ক্ষেত্রে মুতাওয়াল্লির এ ধরনের ক্রয় করাকে অবৈধ কাজ এবং বিশ্বাসভঙ্গ বলে গণ্য করা হবে। এমনটি ঘটলে ওই সম্পত্তি ওয়াকফে প্রত্যার্পণ করতে অথবা নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে তার জন্য পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দান করতে প্রশাসক নির্দেশ দেবেন।
মুতাওয়াল্লি কি নিজ থেকে পদত্যাগ করতে পারেন?
৬৫ ধারা মোতাবেক মুতাওয়াল্লি পদত্যাগ বা অবসর গ্রহণ করতে পারেন। তবে ওয়াকফ প্রশাসকের অনুমতি ছাড়া পদত্যাগ করা যায় না। যদি মুতাওয়াল্লি তার পদ থেকে অবসর গ্রহণের প্রস্তাব করেন বা পদত্যাগ করেন বা অব্যাহতির আবেদন করেন, তবে তাকে অবসর গ্রহণের অনুমতি দান করা হবে না বা তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হবে না বা তাকে অব্যাহতি দান করা হবে না, যদি তিনি তার অবসরগ্রহণ, পদত্যাগ বা অব্যাহতির তারিখে হিসাবের বিবরণী দাখিল না করেন এবং তা নিরীক্ষিত না হয় এবং যদি তিনি ওই তারিখ পর্যন্ত ৭১ ধারার অধীন প্রদেয় চাঁদা পরিশোধ না করেন। ধারা ৬৬ অনুসারে, প্রশাসকের অনুমতি ছাড়া মুতাওয়াল্লি কাউকেই তার পদ বা তার কোনো দায়িত্ব অর্পণ করবেন না।

 

 

2Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *