জমি বিক্রিতে প্রতারণা রোধে আইন
অনেক ক্ষেত্রে জমির মালিক প্রথমে একজনের সঙ্গে জমি বিক্রির বায়না করে আর পরে বেশি দামে আরেকজনের কাছে বায়না করা জমি বিক্রি করে অধিক লাভবান হয়। একই জমি নিয়ে বহু ক্রেতার কাছে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় ও সেই অনুযায়ী টাকাও নেয়া হয়। এ ধরনের প্রতারণা রোধ করার জন্য সম্পত্তি হস্তান্তর আইনে ৫৩খ ধারা সংযুক্ত করা হয়েছে। এ বিধান অনুযায়ী ১ জুলাই ২০০৫ থেকে স্থাবর সম্পত্তি বিক্রির উদ্দেশ্যে কোনো বায়না করা হলে বায়না বহাল থাকাকালে ওই জমি অন্য কোনো ব্যক্তির কাছে বিক্রি করা যাবে না। যদি বিক্রি করা হয় তাহলে ওই বিক্রি বাতিল বলে গণ্য হবে। আবার স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে দাতার নামে খতিয়ান থাকার কোনো আইনগত বাধ্যবাধকতা ছিল না। এ ক্ষেত্রে প্রতারণা করার সুযোগ থাকত। এ সমস্যার সমাধানে ধারা ৫৩গ সংযোজন করে স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে খতিয়ানে দলিলদাতার নামে থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে জমি বন্ধক রেখে পরবর্তীতে প্রতারণামূলকভাবে ওই জমি আরেকজনের কাছে পুনঃবন্ধক বা বিক্রি করা হয়। এতে বন্ধকদাতা লাভবান হয় এবং বন্ধকগ্রহীতা প্রতারণার স্বীকার হয়। এসব প্রতিরোধের জন্য আইনে ৫৩ঘ সংযোজন করা হয়। এ ধারা অনুযায়ী স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক দেয়া হলে ওই সম্পত্তি বন্ধক গ্রহীতার সম্মতি ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তির কাছে বিক্রি করা অথবা বন্ধক দেয়া যাবে না। যদি বন্ধক দেয়া বা বিক্রি করা হয়, তবে ওই বিক্রি বা বন্ধক বাতিল বলে গণ্য হবে। স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয়, বন্ধক ও দানপত্র দলিলের সঙ্গে স্বত্ব সংক্রান্ত তথ্য নিশ্চিতকরণের জন্য কোনো এফিডেভিট যুক্ত করার বাধ্যবাধকতা না থাকায় স্বত্ব বিক্রিতে জটিলতার সৃষ্টি হয়। এ জটিলতা নিরসনে আইনে ৫৩ঙ অনুচ্ছেদ সনি্নবেশিত হয়েছে। এ বিধানানুযায়ী প্রত্যেক বিক্রয়, বন্ধক ও হেবা দলিলের সঙ্গে দলিলদাতার স্বত্বসংক্রান্ত এফিডেভিট সংযুক্ত করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
২০০৫ সাল থেকে নতুন ফরমেট বা ছকবদ্ধ আকারে জমির বিক্রয় দলিল সম্পাদন করার নিয়ম চালু হয়েছে। এতে জমি পূর্ববর্তী নূ্যনতম ২৫ বছরের মালিকানার ধারাবাহিক বিবরণ উল্লেখ করতে হয়। ২০০৫ সালের ১ জুলাই থেকে জমির যে কোনো হস্তান্তরযোগ্য দলিল রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আইনানুযায়ী, যে দলিল রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক অথচ রেজিস্ট্রেশন করা হয়নি, তখন সেই দলিল নিয়ে আপনি কোনো দাবি করতে পারবেন না। সাফ-কবলা দলিল, হেবা বা দানপত্র, বন্ধকী দলিল, বায়না দলিল, বণ্টননামা দলিলসহ বিভিন্ন হস্তান্তর দলিল অবশ্যই রেজিস্ট্রি করতে হবে। দলিলের বিষয়বস্তু যে এলাকার এখতিয়ারের মধ্যে রয়েছে, সেই এলাকার সাব রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল রেজিস্ট্রি করতে হবে।