M/s. বালুরপাড় হোল্ডিংস (ব্লগ)

জমি সংক্রান্ত আইন ও সমস্যর সমাধান এখানেই

শ্রমিকের মজুরি ও আইন

শ্রমিকের মজুরি ও আইন

মজুরি কী?

‘মজুরি’ শব্দটি সব ধরনের অর্থনৈতিক সুবিধা বেতন, যে কোনো ধরনের বোনাস, অতিরিক্ত সময় কাজের জন্য পারিশ্রমিক, ছুটি বা অবসর, চাকরির শেষে বা চাকরি চুক্তির অন্তর্ভুক্ত অন্যসব প্রদানযোগ্য পারিশ্রমিকের জন্য প্রযোজ্য।
মজুরি পরিশোধের দায়িত্ব কার?
বাংলাদেশ শ্রম আইনের ১২১ ধারা অনুসারে, প্রত্যেক নিয়োগকর্তা তার মাধ্যমে নিয়োগকৃত সব শ্রমিকের মজুরি পরিশোধের জন্য দায়ী। ঠিকাদারের মাধ্যমে নিযুক্ত কোনো শ্রমিকের ক্ষেত্র ছাড়া অন্যসব শ্রমিকের ক্ষেত্রে কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ব্যবস্থাপক অথবা তার তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণের জন্য মালিকের কাছে দায়ী অন্য কোনো ব্যক্তিও মজুরি পরিশোধের জন্য দায়ী থাকবেন। যদি কোনো ঠিকাদারের/চুক্তিকারীর অধীনে কর্মরত শ্রমিক বেতন না পেয়ে থাকে, তবে সে ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের নিয়োগকর্তা সেই শ্রমিকে মজুরি প্রদান করতে বাধ্য থাকবেন। পরে প্রতিষ্ঠানের মালিক সেই অর্থ ঠিকাদারের কাছ থেকে সমন্বয় করে নেবেন।
মজুরি প্রদানের সময়সীমা
মজুরি প্রদানের সর্বোচ্চ সময়সীমা এক মাস। অর্থাৎ কোনো প্রতিষ্ঠানের মালিক যদি তার শ্রমিকদের এক মাসের বেশি সময় পরপর বেতন দেয়ার চুক্তি করেন, তবে সেই চুক্তি বাংলাদেশ শ্রম আইনের লঙ্ঘন হওয়ায় বাতিল বলে গণ্য হবে। ১৫ দিন, এক সপ্তাহ কিংবা দৈনন্দিন হারেও বেতন পরিশোধ করা যেতে পারে। মজুরি প্রদানের যে স্থিতিকাল নির্ধারিত হবে তার পরবর্তী সাত কর্মদিবসের মধ্যে মজুরি পরিশোধ করতে হবে। কোনো শ্রমিক যদি অবসরে যায় বা তার নিয়োগকর্তা দ্বারা ছাঁটাই, অপসারণ, বরখাস্ত এবং অন্য কোনোভাবে চাকরিচ্যুত হয়ে থাকে, তাহলে চাকরির মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার বা চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে প্রদান করতে হবে। সব মজুরি কর্মদিবসেই প্রদান করতে হবে।
মজুরি পরিশোধের মাধ্যম
সব মজুরি প্রচলিত মুদ্রা, কারেন্সি নোট অথবা ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। এ ছাড়া প্রযোজ্য ক্ষেত্রে শ্রমিকের চাহিদা মোতাবেক শ্রমিকের ব্যবহৃত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ইলেকট্রনিক ট্রান্সফারের মাধ্যমে কিংবা অন্য কোনো ডিজিটাল পদ্ধতিতে সরাসরি পরিশোধ করা যাবে।
আপস মীমাংসার মাধ্যমে মজুরি পরিশোধ
১২৪ক ধারা অনুসারে, কর্মরত থাকা বা অবসরে যাওয়া বা চাকরির অবসান বা বরখাস্তাধীন থাকা ইত্যাদিসহ চাকরির যে কোনো পর্যায়ে কোনো শ্রমিকের বা শ্রমিকদের মজুরিসহ আইনত প্রাপ্য পাওনাদি আপস মীমাংসার মাধ্যমে পাওয়ার জন্য প্রধান পরিদর্শক বা প্রধান পরিদর্শক কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে আবেদন করা যাবে। আবেদন পাওয়ার পর প্রধান পরিদর্শক বা প্রধান পরিদর্শক কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সর্বোচ্চ ২০ দিনের মধ্যে উত্থাপিত দাবি নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট মালিক বা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা কিংবা আপস-মীমাংসা বৈঠকের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার কার্যক্রম গ্রহণ করবেন। উত্থাপিত দাবি নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে প্রধান পরিদর্শক বা প্রধান পরিদর্শক কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উদ্যোগ গ্রহণ এবং আলাপ-আলোচনা কিংবা আপস মীমাংসার বৈঠকে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করবেন। আলাপ-আলোচনা অথবা আপস মীমাংসা বৈঠকের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত পক্ষদের জন্য প্রতিপালন করা বাধ্যতামূলক হবে। সিদ্ধান্ত প্রতিপালনে কোনো পক্ষ বা উভয় পক্ষ সম্মত না হলে সংশ্লিষ্ট পক্ষ বা উভয় পক্ষ বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য শ্রম আদালতে মামলা করতে পারবেন এবং শ্রম আদালত এ ধরনের মামলার বিচার করতে গিয়ে মধ্যস্থতাকারীর সিদ্ধান্ত বিবেচনায় নেবে।
মৃত শ্রমিকের অপরিশোধিত মজুরি পরিশোধ ১৩১ ধারা অনুসারে, কোনো শ্রমিককে মজুরি হিসেবে প্রদেয় সব অর্থ তার মৃত্যুজনিত কারণে অথবা তার কোনো খোঁজ না পাওয়ার কারণে যদি পরিশোধ করা না যায়, তাহলে

১। সংশ্লিষ্ট শ্রমিক কর্তৃক মনোনীত কোনো ব্যক্তিকে প্রদান করা হবে;

২। কোনো মনোনীত ব্যক্তি না থাকলে অথবা কোনো কারণে কোনো মনোনীত ব্যক্তিকে তা প্রদান করা না গেলে শ্রম আদালতে জমা দিতে হবে, এবং ওই আদালত বিধি অনুযায়ী সে সম্পর্কে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
শ্রম আদালতে মামলা
যে ক্ষেত্রে কোনো শ্রমিকের মজুরি পরিশোধ করা না হয়, সে ক্ষেত্রে তিনি অথবা তার মৃত্যু হলে তার কোনো উত্তরাধিকারী অথবা কোনো আইনসঙ্গত প্রতিনিধি কর্তৃক মজুরি ফেরত পাওয়ার জন্য অথবা বকেয়া বা বিলম্বিত মজুরি ও অন্যান্য পাওনা আদায়ের জন্য শ্রম আদালতে আবেদন করতে পারবেন। মজুরি প্রদেয় হওয়ার তারিখ থেকে ১২ মাসের মধ্যে আবেদন পেশ করতে হবে। যথেষ্ট কারণ থাকলে পরেও আবেদন করা যাবে। উভয়পক্ষকে শুনানি ও সাক্ষ্য গ্রহণের পর আদালত আবেদনকারীকে মজুরি পরিশোধের জন্য মালিককে নির্দেশ দিতে পারবে। আবেদন বিদ্বেষপ্রসূত অথবা বিরক্তিকর তাহলে আদালত আবেদনকারীকে অনধিক ২০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারবে। আবেদনকারীকে সমন জারির ফি ছাড়া আর কোনো কোর্ট ফি দিতে হবে না। তবে মামলায় সফল হলে আবেদনকারীর কাছ থেকে দেওয়ানি আদালতের কোর্ট ফি আদায় করা হবে। শ্রম আদালতের কোনো আদেশের বিরুদ্ধে আদেশ প্রদানের তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে আপিল করা যাবে।
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *