শ্রম আইন ও আইনি জিজ্ঞাসা
দেশের অর্থনৈতির চাকা সচল রাখতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে দিন রাত কাজ করে চলেছে শ্রমিকরা। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে শ্রমিকদের অনেক সময় বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়। তাই শ্রমিকদের সুবিধার্থে সরকার শ্রমবান্ধব আইন করেছে যা “শ্রম আইন ২০০৬” নামে পরিচিত। কিন্তু এই শ্রম আইন সম্পর্কে ধারণা না থাকায় অনেক সময় নিজেদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় শ্রমিকরা।
১।প্রশ্ন : শ্রম আইন কী? এবং এটি কাদের জন্য প্রযোজ্য? শ্রম আইন আদালত কোথায় অবস্থিত?
উত্তর : যে আইন দ্বারা শ্রমজীবী মানুষের অধিকার সংরক্ষণ করা হয়, সে আইনকে শ্রম আইন বলে। শুধু শ্রমিকদের জন্য এটি প্রযোজ্য। সারা দেশে মোট সাতটি শ্রম আদালত রয়েছে। ঢাকার মতিঝিলে শ্রম ভবনের ছয় তলায় শ্রম আদালত প্রতিষ্ঠিত। এ ছাড়া ঢাকায় একটি শ্রম আপিল আদালত রয়েছে।
২।প্রশ্ন : শ্রম আদালতে কীভাবে মামলা দায়ের করা যায়? শ্রম আদালতে মামলা করতে কত টাকা লাগে?
উত্তর : শ্রম আদালতে মামলা দায়ের করার আগে মালিক পক্ষকে নোটিশ প্রদান করতে হয়। নোটিশের নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি নিজে শ্রম আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেন। অথবা আইনজীবীর মাধ্যমেও মামলা দায়ের করতে পারেন। মামলা পরিচালনার জন্য তিনি যেকোনো আইনজীবী নিয়োগ দিতে পারেন। প্রত্যেক মামলার নির্ধারিত কোর্ট ফি রয়েছে। তবে মামলা পরিচালনার জন্য আইনজীবীকে আলাদা করে ফি দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে আইনজীবীর মান অনুপাতে ফি দিতে হয়।
৩।প্রশ্ন : প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরির ক্ষেত্রে নোটিশ ছাড়া চাকরিচ্যুত করা হলে এবং কোনো পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া না হলে একজন শ্রমিক কী করবেন?
উত্তর : কাউকে পদচ্যুত করতে হলে তিন মাস তার নোটিশকালীন সময়। এ সময়ের মধ্যে নিয়মিত বেতন ও অন্যান্য পাওনা দিয়ে তাকে কেবল চাকরিচ্যুত করতে পারে। আপনি পাওনা চেয়ে প্রথমে নোটিশ প্রদান করেন। যদি নোটিশকালীন সময়ে পাওনা পরিশোধ না করে তাহলে শ্রম আদালতে মামলা করতে পারেন।
৪।প্রশ্ন : তিন মাসের বেতন বকেয়া থাকা অবস্থায় যদি কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায় তাহলে শ্রমিক বা কর্মচারী কী করবেন?
উত্তর : আপনি মালিককে পাওনা পরিশোধে প্রথমে আইনি নোটিশ দিতে পারেন। নোটিশের পর পরিশোধ না করলে আপনি শ্রম আদালতে মামলা দায়ের করে প্রাপ্য আদায় করতে পারেন।
৫।প্রশ্ন : মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার পর আদালত যদি পাওনা পরিশোধের নির্দেশ দেয় এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে যদি কোম্পানি আপিল করে তখন কর্মচারী বা শ্রমিকের করণীয় কী?
উত্তর : শ্রম আদালতে যেহেতু আপনার পক্ষে রায় হয়েছে। সেহেতু আপনার অর্ধেক কাজ সম্পন্ন। এখন দ্বিতীয় কাজ হলো আপিল চলাকালীনও মামলা পরিচালনা করা। কেননা এতে আপনার অনুপস্থিতিতে রায় হয়ে যেতে পারে।
৬।প্রশ্ন : কোনো চাকরিচ্যুত শ্রমজীবীর যদি মামলা পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ না থাকে সে ক্ষেত্রে বিনামূল্যে মামলা পরিচালনার কোনো সুযোগ আছে কি?
উত্তর : শ্রমিকদের অর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে সরকারিভাবে বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দেওয়া হয়। দেশের প্রত্যেক আদালতে এ সুবিধা রয়েছে। এর প্রধান কার্যালয় রাজধানীর দৈনিক বাংলা মোড়ে শ্রম ভবনের ছয় তলা।
৭।প্রশ্ন : গর্ভকালীন সময়ে নারী শ্রমিকরা কী কী সুবিধা পেয়ে থাকে? গর্ভধারণের সময় ওই নারী শ্রমিক মারা গেলে প্রসূতি কল্যাণ ভাতা পাবে কি?
উত্তর : শ্রম আইন ২০০৬ অনুসারে একজন নারী শ্রমিক মা হওয়ার সময় মোট ১১২ দিন মজুরি ও অন্যান্য সুবিধাসহ ছুটি পাবেন। নারী শ্রমিক বাচ্চা হওয়ার আগে ৫৬ দিন বা ৮ সপ্তাহ ছুটি পাবেন। বাচ্চা হওয়ার পরও ৫৬ দিন বা আট সপ্তাহ ছুটি পাবেন। এ ছাড়া ওই নারী শ্রমিক ছুটিতে যাওয়ার আগের তিন মাসে মোট যে মজুরি পাবেন তার দৈনিক গড় হিসেবে প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা পাবেন। এবং নারী শ্রমিক মোট ১১২ দিনের জন্য ভাতা পাবেন। এ ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রার্ড ডাক্তারের কাছে থেকে সার্টিফিকেট নিয়ে আট সপ্তাহের মধ্যে সন্তান জন্মানোর সম্ভাবনার বিষয়টি মালিককে জানালে তিনি তিন দিনের মধ্যে ৫৬ দিনের প্রসূতি কল্যাণ ভাতা দিবেন।
সন্তান হওয়ার পর মা শ্রমিক মালিকের কাছে প্রমাণ পেশ করলে, প্রমাণ পেশের তারিখ থেকে তিন দিনের মধ্যে বাকি ৫৬ দিনের ভাতা দেবেন । তবে শর্ত হলো এর আগে ওই প্রতিষ্ঠানে মা শ্রমিককে ছয় মাস চাকরি করতে হবে। এ ছাড়া সন্তান হওয়ার সময় মা যদি মারা যান, তাহলে তার সন্তান উত্তরাধিকারী প্রসূতি কল্যাণ ভাতা পাবে। সন্তানও যদি মারা যায় তাহলে তার স্বামী উত্তরাধিকারী ভাতা পাবে।