9 July, 2019
উত্তরাধিকার আইন, ১৯২৫
(১৯২৫ সনের ৩৯নং আইন)
(৩০ শে সেপ্টেম্বর, ১৯২৫)
ভাগ – ২
স্থায়ী নিবাস সম্পর্কিত
ধারা ৪৷ এই অধ্যায়ের প্রয়োগ৷- মৃত ব্যক্তি হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ বা জৈন হইলে এই অধ্যায় প্রযুক্ত হইবে না।
ধারা ৫৷ মৃত ব্যক্তির যথাক্রমে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার নিয়ন্ত্রণকারী আইন৷-(১) মৃত্যুর সময়ে যেখানেই স্থায়ী নিবাস (domicile) থাকুক না কেন মৃত ব্যক্তির বাংলাদেশে অবস্থিত স্থাবর সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার বাংলাদেশের আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হইবে৷ (২) মৃত্যুর সময় যে দেশে স্থায়ী নিবাস থাকিবে মৃত ব্যক্তির অস্থাবর সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার ঐ দেশের আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হইবে।
উদাহরণ
(অ) বাংলাদেশে স্থায়ী নিবাস থাকাকালে ‘ক’ ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডে অস্থাবর সম্পত্তি এবং বাংলাদেশে স্থাবর ও অস্থাবর উভয় প্রকার সম্পত্তি রাখিয়া ফ্রান্সে মারা গেল৷ এক্ষেত্রে সমস্ত সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার বাংলাদেশের আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হইবে।
(আ) ‘ক’ একজন ইংরেজ ব্যক্তি৷ ফ্রান্সে স্থায়ী নিবাস থাকাকালে বাংলাদেশে তাহার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি রাখিয়া বাংলাদেশে মারা গেল৷ অস্থাবর সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার বিষয়টি ফ্রান্সে বসবাসরত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী একজন ইংরেজ ব্যক্তির অস্থাবর সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার ফ্রান্সে প্রচলিত যে বিধিমালা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, উক্ত বিধিমালা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হইবে, এবং স্থাবর সম্পত্তির উত্তরাধিকার বাংলাদেশের আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হইবে।
আলোচনা
এই ধারার প্রথম অংশে বলা হয়েছে যে, মৃত্যুর সময় একজন ব্যক্তির স্থায়ী আবাসভূমি বাংলাদেশ বা অন্য দেশে যেখানেই থাকুক না কেন বাংলাদেশে অবস্থিত তার স্থাবর সম্পত্তির উত্তরাধিকার বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী হবে।
দ্বিতীয় অংশে বলা হয়েছে, মৃত্যুর সময় একজন ব্যক্তির যেদেশে স্থায়ী আবাস থাকবে অস্থাবর সম্পত্তিতে তার উত্তরাধিকার ঐ দেশের আইন অনুযায়ী হবে।
ধারা-৬৷ শুধুমাত্র একটা স্থায়ী আবাস অস্থাবর সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার প্রভাবিত করে। – অস্থাবর সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারের উদ্দেশ্যে একজন ব্যক্তির কেবলমাত্র একটি স্থায়ী আবাস থাকিতে পারিবে।
আলোচনা
এই ধারাটি মূলতঃ Somerville Vs. Somerville (5 Ves. 750) মামলার ভিত্তিতে এই আইনে স্থান পেয়েছে৷ কোন উদ্দেশ্যে একজন ব্যক্তির একাধিক স্থায়ী আবাস থাকতে পারে কিন্তু অস্থাবর সস্পত্তিতে উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে তার একটিমাত্র স্থায়ী আবাস থাকতে পারবে।
ধারা-৭৷ বৈধভাবে জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তির উত্ পত্তি স্থায়ী আবাস৷- বৈধভাবে জন্ম গ্রহণকারী প্রত্যেক ব্যক্তির উত্ পত্তি স্থায়ী সম্পর্কে আবাস তাহার জন্মের সময় তাহার পিতা যে দেশে স্থায়ীভাবে বাস করিতেন কিংবা উক্ত ব্যক্তি মরণোত্তর জাত সন্তান হইলে পিতার মৃত্যুর সময় পিতা যে দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করিতেন ঐ দেশে হইবে।
উদাহরণ
‘ক’ এর জন্মের সময় তার পিতার স্থায়ী আবাস ছিল ইংল্যান্ডে৷ অতএব, ক যে দেশেই জন্মগ্রহণ করুক না কেন তাহার মূল আবাস হবে ইংল্যান্ডে।
আলোচনা
মূল স্থায়ী আবাস বা জন্মসূত্রে স্থায়ী নিবাসঃ Udmy vs Udmy (1 HL Sc 111) মামলায় Lord Westburn বলেছেন, এটা স্বীকৃত নীতি যে, স্থায়ী নিবাস ব্যতীত কোন মানুষ থাকতে পারে না এবং বৈধ জন্মের ক্ষেত্রে জন্মমাত্রই প্রত্যেকটি শিশু তার পিতার এবং অবৈধ জন্মের ক্ষেত্রে প্রতিটি শিশু তার মাতার স্থায়ী নিবাস পেয়ে থাকে৷ মরণোত্তর জাত সন্তানের বেলায় পিতার মৃত্যুর সময় পিতা যে দেশে স্থায়ী নিবাস৷ এটাকেই বলে জন্মসূত্রে স্থায়ী নিবাস বা মূল স্থায়ী নিবাস।
ধারা ৮৷ অবৈধ সন্তানের মূল স্থায়ী নিবাস৷- অবৈধ সন্তানের জন্মের সময় তাহার মাতা যে দেশে স্থায়ীভাবে নিবাসিত ছিলেন, ঐ দেশই হইবে তাহার মূল স্থায়ী নিবাস।
ধারা ৯৷ মূলস্থায়ী নিবাসের স্থায়িত্ব (Continuance)৷- নতুন কোনো স্থায়ী নিবাস অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত মূল স্থায়ী নিবাস বিদ্যমান থাকে।
ধারা ১০৷ নতুন স্থায়ী নিবাস অর্জন৷- মূলস্থায়ী নিবাস নয় এমন কোন দেশে স্থায়ী আবাস (fixed habitation) দলিলের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি নতুন স্থায়ী আবাস অর্জন করিতে পারিবে।
ব্যাখ্যা- বাংলাদেশে বেসামরিক, সামরিক, নৌ কিংবা বিমান বাহিনীতে চাকুরী অথবা কোন পেশা বা জীবিকা (calling) নির্বাহ করিবার সুবাদে শুধুমাত্র বাংলাদেশে বসবাস করিবার কারণে কোনো ব্যক্তি এই দেশে স্থায়ী আবাস দখল করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে না।
উদাহরণ
(অ) ক-এর স্থায়ী নিবাস ইংল্যান্ডে; তিনি বাংলাদেশে আসিয়া তাহার বাকী জীবনকাল এখানেই বসবাস করিয়া কাটিয়ে দিবার ইচ্ছা পোষণ করিয়া ব্যারিস্টার বা ব্যবসায়ী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন৷ তাঁহার বর্তমান স্থায়ী নিবাস বাংলাদেশে হইবে।
(আ) ইংল্যান্ডের স্থায়ী নিবাসী ‘ক’ অস্ট্রেলিয়া যান এবং অস্ট্রেলীয় একটি চাকুরীতে যোগদান করেন এবং ঐ চাকুরীতে বহাল থাকিবার ইচ্ছা পোষণ করেন৷ ‘ক’ অস্ট্রেলিয়ায় একটি স্থায়ী নিবাস অর্জন করিয়াছেন।
(ই) ফ্রান্সে স্থায়ী নিবাসী ‘ক’ বাংলাদেশ সরকারের সহিত কয়েক বত্সরের চুক্তির অধীনে এই দেশে বসবাস করিবার জন্য আসেন৷ তিনি উক্ত সময় শেষে ফ্রান্সে ফিরিয়া যাইবার ইচ্ছা পোষন করেন৷ তিনি বাংলাদেশে কোন স্থায়ী নিবাস অর্জন করেন নাই।
(ঈ) ক-এর স্থায়ী নিবাস ইংল্যান্ডে; তিনি বিলুপ্ত অংশীদারিত্বের বিষয়াবলী অবসায়নের উদ্দেশ্যে বসবাস করিতে বাংলাদেশে যান, এবং উক্ত উদ্দেশ্য পূরণ হওয়া মাত্র ইংল্যান্ডে ফিরিয়া যাইবার ইচ্ছা পোষণ করেন৷ তাঁহার বসবাসের মেয়াদ যত দীর্ঘই হোক না কেন এইরূপ বসবাসের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশে কোন স্থায়ী নিবাস অর্জন করিবেন না।
(উ) পূর্বোক্ত সর্বশেষ উদাহরণে উল্লেখিত পরিস্থিতিতে ‘ক’ বাংলাদেশে বসবাস করিতে গিয়া পরবর্তীতে তাঁহার ইচ্ছার পরিবর্তন ঘটান এবং বাংলাদেশে স্থায়ী আবাস গড়িয়া তোলেন৷ ‘ক’ বাংলাদেশে স্থায়ী নিবাস অর্জন করিয়াছেন।
(ঊ) চন্দরনগর ফরাসী বসতিতে স্থায়ী নিবাসী৷ ক’ রাজনৈতিক কারণে ঢাকায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হন এবং রাজনৈতিক পরিবর্তন সংঘটিত হইলে তিনি চন্দরনগরে ফিরিতে পারিবেন এই আশায় অনেক বত্সর ঢাকাতে বসবাস করেন৷ এইরূপ বাস করিবার কারণে তিনি বাংলাদেশে কোন স্থায়ী নিবাস অর্জন করেন নাই।
(ঋ) পূর্বোক্ত সর্বশেষ উদাহরণে বর্ণিত পরিস্থিতি ঢাকায় আসিয়া বসবাস করিবার এক পর্যায়ে চন্দরনগরে নিরাপদে ফেরার উক্ত রাজনৈতিক পরিবর্তন সংঘটিত হইবার পরে ‘ক’ অব্যাহতভাবে ঢাকায় বসবাস করিতে থাকে এবং ঢাকাতে তাহার স্থায়ী আবাস হইবে এইরূপ ইচ্ছা পোষণ করেন৷ ‘ক’ বাংলাদেশে স্থায়ী নিবাস গ্রহণ (অর্জন) করিয়াছেন।
আলোচনা
কিভাবে নতুন স্থায়ী নিবাস অর্জন (গ্রহণ) করা যায় সে সম্পর্কে এই ধারায় আলোচনা করা হয়েছে৷ মূল স্থায়ী নিবাস নয় এমন যে কোন দেশে স্থায়ী আবাস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার নতুন স্থায়ী নিবাস গ্রহণ করতে পারে৷ তবে এই ধারাটি এ্যাংলো- ইন্ডিয়ান হিসেবে পরিচিত জাতি এবং স্থায়ীভাবে এখানে বসবাসকৃত জাতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না (PLD 1958 (Lah.) 699)।
ধারা-১১৷বাংলাদেশে স্থায়ী নিবাস গ্রহণের বিশেষ পদ্ধতি৷- বাংলাদেশে স্থায়ী নিবাস গ্রহণের ইচ্ছা সম্বলিত স্বহস্তে লিখিত ঘোষণাপত্র তৈরী এবং সরকার কর্তৃক এতদুদ্দেশ্যে নিয়োজিত বাংলাদেশের কোন অফিসে উহা দাখিল পূর্বক যে কোন ব্যক্তি বাংলাদেশে স্থায়ী নিবাস গ্রহণ করিতে পারিবেনঃ তবে শর্ত থাকে যে, এইরূপ ঘোষণাদানের অব্যবহিত এক বত্সর পূর্ব পর্যন্ত তাহাকে বাংলাদেশে বসবাস করিতে হইবে।
ধারা-১২৷ বিদেশী সরকারের প্রতিনিধি বা তাহার পরিবারের অংশ হিসাবে আবাসের মাধ্যমে স্থায়ী নিবাস গ্রহণ করা যাইবে না৷ – কোন দেশের সরকার কর্তৃক উহার রাষ্ট্রদূত, কনসাল বা অন্যকোন প্রতিনিধি হিসাবে অন্যকোনো দেশে নিয়োগকৃত কোনো ব্যক্তি তাঁহার নিয়োগের সুবাদে শুধুমাত্র ঐ অন্যদেশে বসবাস করিবার কারণে সেখানে স্থায়ী নিবাস গ্রহণ করেন না কিংবা এইরূপ প্রথমোল্লিখিত ব্যক্তির পরিবারের অংশ বা চাকর হিসাবে তাঁহার সহিত শুধুমাত্র বসবাসের কারণে অন্যকোন ব্যক্তি এইরূপ কোন স্থায়ী নিবাস গ্রহণ করেন না।
ধারা-১৩৷ নতুন স্থায়ী নিবাসের স্থায়িত্ব৷- পূর্বের স্থায়ী নিবাস পুনরায় গ্রহণ অথবা অন্য একটি অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত নতুন স্থায়ী নিবাস অব্যাহত থাকিবে।
ধারা-১৪৷ নাবালকের স্থায়ী নিবাস৷ – নাবালকের স্থায়ী নিবাস পিতামাতার স্থায়ী নিবাস অনুসরণ করিবে, যাহাদের নিকট হইতে সে মূল স্থায়ী নিবাস পাইয়াছে।
ব্যতিক্রম- নাবালক বিবাহিত হইলে, কিংবা প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোন পদ ধারণ করিলে অথবা নিয়োজিত থাকিলে কিংবা পিতামাতার সম্মতিতে পৃথক কোন ব্যবসা শুরু করিলে তাহার স্থায়ী নিবাস তাহার পিতামাতার স্থায়ী নিবাসের সহিত পরবর্তিত হইবে না।
ধারা-১৫৷ বিবাহের ফলে মহিলা কর্তৃক অর্জিত স্থায়ী নিবাস৷- বিবাহের মাধ্যমে একজন মহিলা তাহার স্বামীর স্থায়ী নিবাস অর্জন করিয়া থাকেন, যদি পূর্বে তাহার (মহিলার) ঐ একই স্থায়ী নিবাস না থাকে।
ধারা-১৬৷ বিবাহ চলাকালে স্ত্রীর স্থায়ী নিবাস৷- বিবাহকালীন সময়ে স্ত্রীর স্থায়ী নিবাস তাহার স্বামীর স্থায়ী অনুসরণ করিবে।
ব্যতিক্রম- কোন উপযুক্ত আদালতের দণ্ড দ্বারা স্বামী-স্ত্রী উভয়ে পৃথক হইয়া গেলে, কিংবা স্বামীকে দীপান্তরে পাঠানো হইলে স্ত্রীর স্থায়ী নিবাস আর স্বামীর স্থায়ী নিবাসকে অনুসরণ করিবে না।
ধারা-১৭৷ নাবালকের নতুন স্থায়ী নিবাস অর্জন৷ – এই ভাগে ইতিপূর্বে অন্যভাবে যাহা কিছু বলা হইয়াছে তাহা ব্যতীত, একজন ব্যক্তি তাহার নাবালকত্ব চলাকালে নতুন কোন স্থায়ী নিবাস অর্জন করিতে পারে না।
ধারা-১৮৷ পাগলের নতুন স্থায়ী নিবাস অর্জন৷- অন্যকোন ব্যক্তির স্থায়ী নিবাস অনুসরণকারী কোন স্থায়ী নিবাস ব্যতীত অন্যকোন ভাবে একজন বিকৃত মস্তিষ্ক ব্যক্তি নতুন কোন স্থায়ী নিবাস অর্জন করিতে পারেন না।।
ধারা-১৯৷ অন্য কোথাও স্থায়ী নিবাস প্রমাণের অবর্তমানের বাংলাদেশে অস্থাবর সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার৷- অন্য কোথাও কোন স্থায়ী নিবাসের প্রমাণের অবর্তমানে যদি কোন ব্যক্তি বাংলাদেশে অস্থাবর সম্পত্তি রাখিয়া মারা যায়, তাহা হইলে ঐ সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার বাংলাদেশের আইন দ্বারা নিয়স্ত্রিত হইবে।