অভিভাবকত্ব কি?
নাবালক, নির্বোধ ও উণ্মাদ যারা নিজের দেখাশোনা নিজে করতে অক্ষম তাদের বিষয়-সম্পত্তি, শিক্ষা, সামাজিক সমস্যা, নিরাপত্তা এবং প্রয়োজনবোধে তাদের পক্ষে যে কোন মামলা- মোকদ্দমা পরিচালনার দায়িত্ব আইনসম্মতভাবে পালন করাই হচ্ছে অভিভাবকত্ব৷ নাবালকরা তাদের অপরিপক্ক বুদ্ধি,অভিজ্ঞতার অভাব এবং সীমিত বিচার বুদ্ধি সম্পন্ন হওয়ার কারণে অন্য কেউ যেন তার দূর্বলতার সুযোগ গ্রহণ করতে না পারে সেজন্য তাদের অধিকার সংরক্ষণের য়োজনে অভিভাবকদের দরকার । আইনগত ব্যাখ্যাঃ মুসলিম আইনে বাবা হলেন সন্তানের প্রকৃত আইনগত অভিভাবক। এ আইনে মা সন্তানের অভিভাবক হতে পারেন না। তবে তিনি সন্তানের রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারেন বা জিম্মাদার হতে পারেন। মুসলিম আইনে বাবাই একমাত্র অভিভাবক। তার মৃত্যুতে অন্য কেউ অভিভাবক নিযুক্ত হবেন। তবে একটা নির্দিষ্টকরণ বয়স পর্যন্ত মা সন্তানদের অভিভাবক বা তত্ত্বাবধানের অধিকারীনি। কিন্তু তিনি স্বাভাবিক অভিভাবক নন। নাবালকের নিকট-আত্নীয় নাবালকের প্রকৃতিগত অভিভাবক বলে গন্য হয়৷ অনেক সময় কোন বিশেষ ব্যক্তিকে অভিভাবকের দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। মুসলিম আইনে পিতা জীবিত থাকলে তিনিই নাবালকের শরীর ও সম্পত্তির স্বাভাবিক ও আইনানুগ অভিভাবক৷ নাবালকের পক্ষে কোন কাজ সম্পন্ন করতে হলে পিতাকে আদালতের হুকুমের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। ছেলের ৭ বছরের পরে ও মেয়ের বয়ঃসন্ধির পর পিতা নাবালকের অভিভাবকত্বের অধিকার পান। তবে’ পিতার এই অধিকার চূড়ান্ত নয়। সবক্ষেত্রেই আদালত সন্তানের কল্যাণকে প্রাধান্য দেবেন। পিতার আচরণের কারণে (যেমনঃ পিতা যদি কখনই সন্তানদের ভরণপোষণ না দেয়) সন্তানদের মায়ের কাছ থেকে আলাদা করা যুক্তিসঙ্গত হবে না। কারণ বাবা তার আচরণ দিয়ে বুঝিয়েছেন যে সে সন্তানের কল্যাণে আগ্রহী নয়। আবার মা যদি বাবার আর্থিক সাহায্য ছাড়াই সফলভাবে সন্তানদের নিজ খরচে লালন পালন করে, সেক্ষেত্রে আদালত সন্তাদের পিতার কাছে দিতে অস্বীকার করতে পারে। বিয়ে–বিচ্ছেদের পর মার অভিভাবকত্ব: সন্তানের অভিভাবকত্ব নিয়ে বিচ্ছেদপ্রাপ্ত দম্পত্তির মধ্যে প্রায়ই বিরোধ তৈরী হয়। মা কিছু সময় পর্যন্ত সন্তানের জিম্মাদার থাকেন। মুসলিম আইনে মা নিচের সময় পর্যন্ত সন্তানের জিম্মাদার থাকতে পারেন। যেমনঃ ১৷ ছেলে সন্তানের সাত বছর বয়স পর্যন্ত; ২৷ মেয়ে সন্তানের বয়ঃসন্ধি কাল পর্যন্ত; সন্তানের বয়স শর্ত অনুযায়ী থাকলেও মা জিম্মাদার থাকতে পারবেন না নিচের
কারণগুলো জন্য:
১।অসৎ জীবন যাপন করলে;
২।মা পুনরায় বিয়ে করলে;
৩।সন্তানের প্রতি অবহেলা করলেও
৪। দায়িত্ব পালনে অপারগ হলে
৫। বিয়ে থাকা অবস্থায় বাবার বসবাসস্থল থেকে দূরে কোথাও বসবাস করলে৷
উপরোক্ত কারনগুলো ব্যতীত আদালতের আদেশ ছাড়া মাকে জিম্মাদারের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। তালাক হওয়ার কারণে মা জিম্মাদারিত্বের অধিকার হারান না। কিন্তু মা যদি অনাত্নীয় এমন কাউকে বিয়ে করেন যিনি সন্তানের সাথে রক্ত সম্পর্কের কারণে নিষিদ্ধ স্তরের কেউ নন, এরকম ক্ষেত্রে মা পুনরায় বিয়ে করায় জিম্মাদারিত্বের অধিকার হারাবেন। অবশ্য আদালত যদি মনে করে দ্বিতীয় বিয়ে করা সত্ত্বেও মার সাথে থাকলেই সন্তানের কল্যাণ হবে, তবে আদালত মাকে অনেক সময় সন্তানের অভিভাবকত্ব দিতে পারেন।
মা মারা গেলে কারা নাবালকের অভিভাবক হতে পারবে যখন কোন নাবালকের মা মারা যায় বা অন্য কোন কারণে অভিভাবকত্বের অধিকার হারিয়ে ফেলে সেক্ষেত্রে নিচের মহিলা আত্নীয়রা তার জিম্মাদারিত্বের অধিকার পাবে৷ তারা হলেনঃ
১৷ মা-এর মা, যত উপরের দিকে হোক (যেমনঃ নানী, নানীর মা);
২৷ পিতার মা, যত উপরের দিকে হোক (দাদী, দাদীর মা);
৩৷ আপন বোন (যাদের বাবা-মা একই);
৪৷ বৈপিত্রেয় বোন (মা একই কিন্তু বাবা ভিন্ন);
৫৷ আপন বোনের মেয়ে, যত নিচের দিকে হোক;
৬৷ বৈপিত্রেয় বোনের মেয়ে, যত নিচের দিকে হোক;
৭৷ আপন খালা, যত উপরের দিকে হোক;
৮৷ বৈপিত্রেয় খালা, যত উপরের দিকে হোক এবং
৯৷ পূর্ণ ফুফু, যত উপরের দিকে হোক৷ উপরের উল্লিখিত মহিলারা না থাকলে নাবালকের যারা অভিভাবক হতে পারে তারা জিম্মাদারিত্বের অধিকার পাবে। ১৯৮০ সালের গার্ডিয়ান এন্ড ওয়ার্ডস এক্ট অনুযায়ীঃ যে ব্যক্তি কোন নাবালকের শরীর অথবা সম্পত্তি অথবা সম্পত্তি ও শরীর উভয়ের তত্বাবধানে নিযুক্ত থাকে তাকে অভিভাবক বলে। ১৯৮০ সালের গার্ডিয়ান এন্ড ওয়ার্ডস এক্ট এর ৮ নং ধারা মতে, নাবালকের অভিভাবক নিয়োগের জন্য আদালতে দরখাস্ত করতে হবে।’ আদালত সেই দরখাস্ত পরীক্ষা করে দেখবেন এবং প্রয়োজন মনে করলে নাবালকের কল্যাণের জন্য অভিভাবক নিযুক্ত করবেন। আদালত যাকে অভিভাবক নিয়োগ করবেন তিনি আদালতের অনুমতি ছাড়া নাবালকের সম্পত্তি বিক্রি বা বন্ধক দিতে পারবেন না এবং ১০ নং ধারা অনুযায়ী অনুমোদিত ফরমে তা করতে হবে।