পারিবারিক সহিংসতায় ক্ষতিপূরণ
পারিবারিক সহিংসতার শিকার হলে ক্ষতিপূরণ দাবি করা যাবে। আইনে এ সুযোগ রয়েছে। এ জন্য আইন অনুযায়ী আদালতে আবেদন করতে হবে। পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন-২০১০ অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ চাওয়ার সুযোগ আছে। এ আইনের ৩ ধারা অনুসারে পারিবারিক সহিংসতা বলতে পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে, এমন কোনো ব্যক্তি কর্তৃক অন্য কোনো নারী বা শিশুর ওপর শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন অথবা আর্থিক ক্ষতিকে বোঝায়। এ ধরনের পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হলে দায়ী ব্যক্তির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ দাবি করা যাবে।
কীভাবে আবেদন করতে হবে:
নির্যাতনের শিকার কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আদালতে ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করতে পারেন। আদালত ওই আবেদন ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করবেন। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে এ আবেদন করা যাবে। সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির পক্ষে প্রয়োগকারী কর্মকর্তাও এই আইনের অধীনে প্রতিকার পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত যদি উপযুক্ত মনে করেন, তাহলে পারিবারিক সহিংসতা ঘটতে পারে, এমন অথবা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হবে, এমন যেকোনো প্রকার কাজ, যেমন মোবাইল বা টেলিফোনে যোগাযোগ ইত্যাদি থেকে বিরত থাকার জন্য আদালত প্রতিপক্ষকে আদেশ দিতে পারেন। এ ছাড়া নির্যাতনের শিকার নারী বা শিশুর সুরক্ষার জন্য সুরক্ষা আদেশও জারি করতে পারেন। আদালতে কোনো আবেদন দাখিল হলে প্রতিপক্ষকে নোটিশ দিয়ে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হবে। প্রতিপক্ষের প্রতি উপস্থিতির জন্য নোটিশ জারি করা হয়েছে, কিন্তু তিনি যদি উপস্থিত না হন অথবা একবার উপস্থিত হয়ে পরবর্তী সময়ে আর হাজির না হন, তাহলে আদালত তাঁর অনুপস্থিতিতে বিচারের আবেদন একতরফাভাবে নিষ্পত্তি করতে পারেন। ক্ষতিপূরণের আবেদনের ক্ষেত্রে উভয় পক্ষকে শুনানির সুযোগ প্রদান করে আদালত যেরূপ উপযুক্ত মনে করবেন, সেইরূপ আদেশ দেবেন।
ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের ক্ষেত্রে আদালত যে বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্বারোপ করবেন, সেগুলো হলো
১। সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আঘাত, ভোগান্তি, শারীরিক-মানসিক ভোগান্তি, ক্ষতির প্রকৃতি ও পরিমাণ।
২।ক্ষতির জন্য চিকিত্সা খরচ।
৩।ক্ষতির স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব।
৪।ক্ষতির কারণে বর্তমান ও ভবিষ্যতে উপার্জনের ওপর প্রভাব।
৫। নির্যাতনের ফলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির ধ্বংসকৃত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মূল্য।
৬। সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আক্রান্ত হওয়ার কারণে ইতিমধ্যে যে অর্থ ব্যয় করেছেন, তার যুক্তিসংগত পরিমাণ এবং
৭।সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ও তাঁর সন্তানের ভরণপোষণের জন্য তিনি যেরূপ জীবন যাপন করতে অভ্যস্ত, সেইরূপ জীবনযাত্রার জন্য পর্যাপ্ত ও যুক্তিসংগত অর্থ প্রদানের জন্য আদালত প্রতিপক্ষকে আদেশ দিতে পারেন। আদালত মনে করলে প্রতিপক্ষকে এককালীন মাসিক পরিশোধযোগ্য ভরণপোষণের আদেশ দিতে পারেন। যদি অভিযুক্ত ব্যক্তি সরকারি, বেসরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন, তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে ক্ষতিপূরণ আদেশের একটি প্রতিলিপি পাঠাতে হবে, অথবা ব্যক্তিগত সম্পত্তি থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা হবে। প্রতিপক্ষ ক্ষতিপূরণ দিতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অভিযুক্ত ব্যক্তির মজুরি অথবা অন্য কোনো আয় থেকে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিকে সরাসরি অথবা তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা প্রদানের নির্দেশ দিতে পারবেন। ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের ক্ষেত্রে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের কোনো আর্থিক সীমা থাকবে না।