19 September, 2016
পঞ্চম অধ্যায়
মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিবর্গ এবং সাক্ষীদিগকে সহায়তা এবং তাহাদের সুরক্ষা পুনর্বাসন
পাচারের শিকার ব্যক্তিবর্গকে বা ভিকটিমদের চিহ্নিতকরণ উদ্ধার
৩২। (১) সরকার মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণ, উদ্ধার, প্রত্যাবাসন এবং পুনর্বাসনকল্পে বিধি দ্বারা কর্মপ্রণালী তৈরী করিবে এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাসমূহের সহিত অংশীদারিত্বে কাজ করিবে।
(২) মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণ, উদ্ধার, প্রত্যাবাসন এবং পুনর্বাসনের কর্মকাণ্ডসমূহ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের, বিশেষতঃ নারী ও শিশুদের কল্যাণ ও বিশেষ চাহিদার (special needs) দিকে লক্ষ্য রাখিয়া এবং তাহাদের উপযোগী (victims-friendly) প্রক্রিয়ায় পরিচালনা করিতে হইবে।
ভিকটিম মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিবর্গের প্রত্যাবাসন এবং প্রত্যাবর্তন
৩৩। (১) কোন বাংলাদেশী নাগরিক অন্য কোন দেশে মানব পাচারের শিকার ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত হইলে, সরকার সংশ্লিষ্ট দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসের এবং প্রয়োজনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় উক্ত ব্যক্তিকে বাংলাদেশে ফেরত আনিবার প্রক্রিয়ার সূচনা করিবে।
(২) উপ-ধারা (১) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোন বিদেশী রাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাস মানব পাচারের শিকার কোন বাংলাদেশী নাগরিক উক্ত দেশে আটক বা বন্দী অবস্থায় আছেন বলিয়া অবগত হইলে, উক্ত দূতাবাস ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে উদ্ধার করিবার, মুক্ত করাইবার এবং বাংলাদেশে পাঠাইবার প্রক্রিয়ার সূচনা করিবে।
(৩) মানব পাচারের শিকার কোন ব্যক্তি কোন মামলার কারণে কোন বিদেশী রাষ্ট্রে থাকিতে বাধ্য হইলে বাংলাদেশ দূতাবাস উক্ত ব্যক্তিকে আইনি পরামর্শ বা সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।
(৪) যেই ক্ষেত্রে একজন বিদেশী নাগরিক বাংলাদেশে মানব পাচারের শিকার ব্যক্তি হিসাবে চিহ্নিত হইবেন সেইক্ষেত্রে যথাযথ আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করিয়া উক্ত ব্যক্তির জবানবন্দি গ্রহণ করতঃ সরকার সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের বাংলাদেশস্থ দূতাবাসের সহযোগিতায়, যথোপযুক্ত কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে, উক্ত ব্যক্তিকে তাহার স্বদেশে ফেরত পাঠাইবার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।
ভিকটিম বা মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিবর্গ এবং জনসাধারণকে সাধারণভাবে তথ্য সরবরাহ
৩৪। (১) মানব পাচারের শিকার ব্যক্তি সরকার বা পুলিশ বা ক্ষেত্রমত, বেসরকারি সংস্থাসমূহের নিকট হইতে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে গৃহীত ব্যবস্থা এবং সংশ্লিষ্ট ফৌজদারী মামলার সর্বশেষ অবস্থা সম্বন্ধে মাসে অন্তত একবার অবগত হইবার অধিকারী হইবে।
(২) তদন্তকারী কর্মকর্তা বা মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিকে চিহ্নিত ও উদ্ধারকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান উক্ত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণের অধিকার, আইনি সহায়তার সুযোগ এবং এই আইনের অধীন অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাদি সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে অবগত করিবে।
(৩) মানব পাচার অপরাধের শিকার ব্যক্তিদের গোপনীয়তার অধিকারের প্রতি যথোপযুক্ত সম্মান প্রদর্শনপূর্বক উক্ত ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণ, উদ্ধার, স্থানান্তর, প্রত্যাবর্তন, প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন সংক্রান্ত দায়িত্বসমূহ কার্যকরভাবে সম্পাদনে সরকারের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী, সাংবাদিক বা জনসাধারণকে সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যসমেত একটি ব্যাপক ভিত্তিক তথ্যভাণ্ডার পরিচালনা করিবে।
আশ্রয় কেন্দ্র এবং পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা
৩৫। (১) মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিদের শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসা সেবা, পুনর্বাসন এবং পরিবারের সহিত পুনর্মিলনের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকার সমগ্র দেশে পর্যাপ্ত সংখ্যক আশ্রয় কেন্দ্র এবং পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করিবে।
(২) এই আইন বলবৎ হইবার সঙ্গে সঙ্গে এই ধরনের কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করিতে ইচ্ছুক অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে এবং শর্তাধীনে সরকার হইতে লাইসেন্স বা সাময়িক অনুমোদন লাভ না করিয়া কোন আশ্রয় কেন্দ্র বা পুনর্বাসন কেন্দ্র বা অন্য কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালনা করিবেনাঃ
তবে শর্ত থাকে যে,ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত আশ্রয় বা পুনর্বাসন কেন্দ্রসমূহকে এই আইন বলবৎ হইবার ৬ (ছয়) মাসের মধ্যে এই ধরনের লাইসেন্স বা অনুমোদন লইতে হইবে।
নিরাপত্তা বিধান পুনর্বাসন এবং সামাজিক একাঙ্গীভূতকরণ
৩৬। (১) উদ্ধার হইবার পর, মানব পাচার অপরাধের শিকার ব্যক্তিকে, স্বীয় পরিবারে ফেরত পাঠানো না হইলে, কোন সরকারি বা বেসরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে বা পুনর্বাসনকেন্দ্রে প্রেরণ করিতে হইবে এবং সেইক্ষেত্রে এতদবিষয়ক যাবতীয় তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে সরকার বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠাইতে হইবে।
(২) আশ্রয় বা পুনর্বাসনকেন্দ্রে অবস্থানরত মানব পাচারের শিকার যে কোন ব্যক্তি বা ভিকটিম সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মতামত প্রদানের এবং টেকসই পুনর্বাসন ও সামাজিক একাঙ্গীভূতকরণ সুবিধাদিসহ শারীরিক চিকিৎসা এবং আইনি ও মানসিক পরামর্শ সেবা পাইবার অধিকারী হইবে।
ফৌজদারী বিচারের ক্ষেত্রে ভিকটিম বা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি এবং সাক্ষীর সুরক্ষা বিধান
৩৭। (১) এই আইনের বিষয়বস্ত্ত লইয়া কর্মরত প্রত্যেক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোন ভিকটিম বা মানব পাচারের শিকার ব্যক্তি এই আইন বা প্রচলিত অন্য কোন আইনের অধীনে যেন অভিযুক্ত না হন বা শাস্তি না পান তাহা নিশ্চিত করিতে সচেষ্ট থাকিবে।
(২) ট্রাইব্যুনালের অনুমতি ব্যতিরেকে মানব পাচারের শিকার কোন ব্যক্তি বা তাহার পরিবারের কোন সদস্যের নাম, ছবি বা তথ্য বা পরিচয় কেহ প্রচার বা সম্প্রচার করিতে পারিবে না এবং উক্ত বিধান লংঘনকারী ব্যক্তি অনধিক ০৬ (ছয়) মাসের কারাদণ্ডে বা অনধিক ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
(৩) প্রত্যেক মানব পাচারের শিকার ব্যক্তি বা সাক্ষী, তাহার প্রতি হুমকি প্রদর্শিত হইলে অথবা হুমকি বা যে কোন প্রকার ঝুঁকির আশঙ্কা সৃষ্টি হইলে পুলিশী নিরাপত্তা পাইবার এবং সরকার কর্তৃক প্রদেয় অন্যান্য সুরক্ষামূলক ব্যবস্থার অধিকারী হইবে এবং আদালতে এবং অন্যান্য ফৌজদারী প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের সময় বা আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাসের সময় মানব পাচারের শিকার ব্যক্তি বা সাক্ষীর নিরাপত্তা বিধান করা সেই সব সরকারি সুরক্ষামূলক ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত হইবে।
শিশু ভিকটিম এবং শিশু সাক্ষীর অধিকার রক্ষা
৩৮। (১) ভিকটিম এবং সাক্ষীর সুরক্ষা বিধান বিষয়ক এই আইনের বিধানসমূহের সামগ্রীকতাকে ক্ষুণ্ন না করিয়া, মানব পাচার অপরাধের শিকার শিশু এবং শিশু সাক্ষী লইয়া কাজ করিবার সময় ট্রাইব্যুনালসহ যে কোন ব্যক্তি শিশুর সর্বোত্তম কল্যাণ এবং অগ্রাধিকারের নীতি প্রয়োগ করিবে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দলিলে সন্নিবেশিত নীতিসহ আপাততঃ বলবৎ এতদবিষয়ক যে কোন আইনের বিধানসমূহ অনুসরণ করিবে এবং মানব পাচারের শিকার শিশুদের অপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত হওয়া অথবা তাহাদের এবং শিশু সাক্ষীদের কলঙ্কিত হওয়া বা সামাজিকভাবে একঘরে হওয়া এড়াইবার জন্য এই আইনের অধীন কর্মরত সংশ্লিষ্ট সকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।
(২) পুলিশ বা সরকার বা এই আইনের বিষয়বস্ত্ত লইয়া কর্মরত কোন ব্যক্তি শিশু-বান্ধব কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ বা শিশু-বান্ধব প্রক্রিয়া ব্যতীত অন্য কোনভাবে এই আইনের সহিত দ্বন্দ্বে (Conflict) বা ইহার সংস্পর্শে (Contact) আসা কোন শিশু লইয়া কাজ করিবে না এবং মানব পাচারের শিকার কোন শিশুকে বা ভিকটিম শিশুকে উন্নয়ন কেন্দ্রে (development centre/remand home) প্রেরণ করা বা আটক রাখা যাইবেনা।
ক্ষতিপূরণ আদায়ে দেওয়ানী মামলা রুজু করিবার অধিকার
৩৯। ফৌজদারী মামলা রুজু করিবার অধিকার অক্ষুণ্ন রাখিয়া এবং দায়েরকৃত কোন ফৌজদারী মামলার পাশাপাশি, ভিকটিম বা পাচারের শিকার ব্যক্তি এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধের ফলে সৃষ্ট তাহার প্রকৃত ক্লেশ (sufferance) বা আইনগত ক্ষতির (legal injury) জন্য বা উক্ত অপরাধের সহিত সম্পৃক্ত কোন চুক্তি লংঘনের জন্য দেওয়ানী আদালতে ক্ষতিপূরণের মামলা দায়ের করিতে পারিবে।
মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিকে আর্থিক সহায়তা প্রদান
৪০। মানব পাচারের শিকার কোন ব্যক্তি বা ভিকটিমকে সরকার এই আইনের অধীন প্রতিষ্ঠিত তহবিল হইতে আর্থিক সহায়তা প্রদান করিতে পারিবে, তবে এই ধরনের সহায়তা কোন বেসরকারি সংস্থা হইতে অথবা আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০ (২০০০ সনের ৬ নং আইন) অনুসারে আইনগত সহায়তা পাইবার ক্ষেত্রে তাহার কোন সুযোগ বা অধিকারকে খর্ব করিবে না।