23 October, 2016
ভরণপোষণের অধিকার
ভরণপোষণের অধিকার কনটেন্টটিতে স্ত্রীর ভরণপোষণ, সন্তানের ভরণপোষণ, মা-বাবার ভরণপোষণ, দরিদ্র আত্মীয়ের ভরণপোষণ, হিন্দু আইনে ভরণপোষণ, খ্রীস্টান আইনে ভরণপোষণ, বিয়ে বিচ্ছেদের পর ভরণপোষণ, ভরণপোষণের দাবিতে কোথায় প্রতিকার পাওয়া যাবে , ভরণপোষণের অধিকার কখন নষ্ট হয় এই সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে ।
ভরণপোষণের অধিকার
প্রশ্নঃআমাদের বিয়ে হয়েছে একবছর। আমার স্বামী আমাকে উঠিয়ে নিচ্ছে না আবার ভরণপোষণও দিচ্ছে না, এখন কি করা যায় ?
উত্তরঃ তাহলে সে অবশ্যই ভরণপোষণ দিতে বাধ্য। এমন কি, কাবিন নামায় ভরণপোষণ দেয়ার কথা না থাকলেও আইন অনুসারে স্বামী স্ত্রীকে ভরণ পোষণ দিতে বাধ্য।
প্রশ্নঃ আমি কি তাহলে ভরণপোষণ পাবো ?
উত্তরঃ কেন নয়, অবশ্যই আপনি ভরণপোষণ পাবেন। স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, বাবা-মা ও দরিদ্র্য আত্মীয়রা ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী। একজন সক্ষম ও উপার্জনশীল ব্যক্তি তার স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, বাবা-মা ও দরিদ্র্য আত্মীয়দের ভরণপোষণ দিতে বাধ্য।
প্রশ্নঃ আমি শুনেছি স্ত্রীর ভরণপোষণ নাকি বিভিন্ন রকম হয় ?
উত্তরঃ হ্যাঁ, স্ত্রীর ভরণপোষণের ক্ষেত্রে¾ ‘বিবাহিত অবস্থায় একসাথে থাকা, আলাদা থাকা বা তালাকের পর’ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। বিয়ের ফলে কিছু আইনগত অধিকার ও দায়িত্ব সৃষ্টি হয়। যেমন-একত্রে থাকার অধিকার, দেনমোহরের অধিকার, স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর মতামতকে সম্মান প্রদর্শন, স্বামী স্ত্রী পরস্পরের সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে পাবার অধিকার, ভরণপোষণের অধিকার। ভরণপোষণ স্বামীর দায়িত্ব ও স্ত্রীর অধিকার। তাই আইন অনুযায়ী এটা ধরেই নেয়া হয় যে, স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ পাবেন। ভরণপোষণ প্রদানের পর্যায়সমূহ হল-
১।বিবাহিত অবস্থায় ভরণপোষণ
২।বিবাহিত কিন্তু পৃথক থাকা অবস্থায় ভরণপোষণ
৩।বিয়ে–বিচ্ছেদের পর ভরণপোষণ
প্রশ্নঃ বিবাহিত অবস্থায় ভরণপোষণ কি ধরণের ?
উত্তরঃ বিয়ের সম্পর্ক থাকা অবস্থায় স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ পাবেন। তবে এর কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় নি। স্বামীর আর্থিক অবস্থা অনুযায়ী ভরণপোষণ দেবার ক্ষমতা নির্ভর করে।
প্রশ্নঃ আচ্ছা, সন্তানের ভরণপোষণের ক্ষেত্রে তো মা-বাবার দায়িত্ব আছে, তাই না ?
উত্তরঃ হ্যাঁ, মুসলিম আইন অনুযায়ী সন্তানের স্বাভাবিক অভিভাবক বাবা এবং মা মূলতঃ সন্তান লালন পালন করেন। এক্ষেত্রে মাতা-পিতার আলাদা দায়িত্ব আছে।
প্র্শ্নঃ ভরণপোষণের ক্ষেত্রে পিতার দায়িত্ব কি ?
উত্তরঃ একজন মুসলমান পুরুষ সাবালক হওয়া পর্যন্ত ছেলেকে এবং বিয়ের আগ পর্যন্ত মেয়েকে ভরণপোষণ দিতে বাধ্য।
প্রশ্নঃ বিয়ের পর মেয়ে যদি তালাকপ্রাপ্ত হয় ?
উত্তরঃ বিধবা ও তালাক প্রাপ্তা মেয়ে যদি সামর্থবান না হন সেক্ষেত্রে পিতা তাদেরকে ভরণপোষণ দিতে বাধ্য, তবে বিধবা পুত্রবধুকে ভরণপোষণ দিতে তিনি বাধ্য নন।
প্রশ্নঃ সাবালকত্ব অর্জনের পরও যদি সন্তানরা নিজ ভরণপোষণ যোগাতে সমর্থ না হয় তবে ?
উত্তরঃ আইন বাবার কাছে ভরণপোষণ দাবি করাকে অনুমতি দেয়। তবে এক্ষেত্রে পিতা সাবালক সন্তানদের ভরণপোষণ দিতে বাধ্য নন।
প্রশ্নঃ অসুস্থ ও অক্ষম সন্তানদের ভরণপোষণের দায়িত্বও কি বাবার ?
উত্তরঃ হ্যাঁ, অসুস্থ ও অক্ষম সন্তানদের ভরণপোষণের দায়িত্ব বাবার।
প্রশ্নঃ মা যখন সন্তানের জিম্মাদার তখনও বাবা ভরণপোষণ দিবেন ?
উত্তরঃ মা-বাবার বিচ্ছেদের পরেও মা ছেলেকে ৭ বছর বয়স পর্যন্ত ও মেয়েকে বয়োঃসন্ধি পর্যন্ত নিজের কাছে রেখে রক্ষণাবেক্ষণ করার অধিকারী। এই সময়ে সন্তানেরা বাবার কাছ থেকে আলাদা হয়ে মায়ের সঙ্গে বসবাস করলেও বাবা সন্তানের ভরণপোষণ দানে আইনত বাধ্য।
প্রশ্নঃ ভরণপোষণের ক্ষেত্রে মায়ের দায়িত্ব কি ?
উত্তরঃ শুধুমাত্র বাবা সব সময় সন্তানের ভরণপোষণ দিতে বাধ্য নন। যদি কোন মা, বাবার চেয়ে স্বচ্ছল হন তাহলে মাও বাবার মতো সন্তানের ভরণপোষণ দিতে বাধ্য। স্ত্রীর সামাজিক অবস্থা, প্রয়োজন, স্বামীর আর্থিক অবস্থা ইত্যাদি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করেই সাধারণত ভরণপোষণ নির্ধারিত হয়ে থাকে।
প্রশ্নঃ মা-বাবার ভরণপোষণের ক্ষেত্রেও তো সন্তানের দায়িত্ব আছে, তাই না ?
উত্তরঃ হ্যাঁ, দরিদ্র ও অক্ষম বাবা-মাকে ভরণপোষণ দেয়া সন্তানের নৈতিক দায়িত্ব। আদালত বাবা-মার ভরণপোষণের পরিমাণ নির্ধারণ করে দিতে পারে এবং সন্তানদের তা দিতে আদেশ প্রদান করতে পারে।
প্রশ্নঃ স্বচ্ছল সন্তানেরাও কি গরিব মা-বাবাকে ভরণপোষণ দিবে ?
উত্তরঃ মা যদি স্বচ্ছলও হন তবু গরিব ছেলে তাকে দেখতে বাধ্য। উপার্জনক্ষম ছেলেমাত্র গরিব মা-বাবাকে দেখবে বা লালন- পালন করবে।এছাড়া আত্মীয়ের ভরণপোষণের ক্ষেত্রেও কিছু দায়িত্ব আছে। দরিদ্র আত্মীয়রাও ভরণপোষণ পাবার অধিকারী। উত্তরাধিকারে তাদের প্রাপ্য অংশের অনুপাতে তাদের ভরণপোষণ দেয়া যায়। উল্লেখ্য, দাদা-দাদীও নাতির কাছে ভরণপোষণ পেতে পারেন। দাদা-দাদী গরিব না হলে নাতিকে তাদের ভরণপোষণ দিতে হবে না।
প্রশ্নঃ আচ্ছা, মুসলিম আইনেই কি শুধু ভরণপোষণের অধিকার আছে ? হিন্দু আইনে কি কিছু নেই ?
উত্তরঃ হিন্দু আইনেও কোন ব্যক্তির ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকার রয়েছে, যেমন :
১।একজন হিন্দুর কোন সম্পত্তি না থাকলেও সে তার নাবালক ছেলে, অবিবাহিতা মেয়ে ও বাবা-মার ভরণপোষণ করতে আইনতঃ বাধ্য। দায়ভাগা মতে, বাবা সাবালক ছেলেকে ভরণপোষণ করতে আইনতঃ বাধ্য নন।
২।কর্তা যৌথ পরিবারের সকল পুরুষ, তাদের স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের ভরণপোষণে আইনতঃ বাধ্য।
৩।একজন মৃত ব্যক্তি যাদের ভরণপোষণ করতে আইনতঃ বাধ্য ছিল, মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীও মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি হতে তাদের ভরণপোষণ করতে আইনতঃ বাধ্য।
৪।বিবাহ না হওয়া পর্যন্ত বাবা তার কন্যা সন্তানের ভরণপোষণ করতে বাধ্য। বাবার অবর্তমানে কন্যার ভরণপোষণ বাবার সম্পত্তি হতেই চলতে থাকবে।
৫।অক্ষমতা বা অযোগ্যতাহেতু কেউ পৈতৃক সম্পত্তির অধিকারে বঞ্চিত থাকলে তাকে ও তার পরিবারবর্গকে অক্ষম ব্যক্তির বাবা ও বাবার অবর্তমানে বাবার উত্তরাধিকারী যথাযোগ্য ভরণপোষণ দিতে বাধ্য। এছাড়া স্ত্রীর ভরণপোষণের ক্ষেত্রে হিন্দু ধর্মে কিছু আইন আছে।
প্রশ্নঃ খ্রিষ্টান ধর্মে কি ভরণপোষণের অধিকার নেই ?
উত্তরঃ হ্যাঁ, আছে। ডিভোর্স এ্যাক্টের ৩৭ ধারা অনুযায়ী, স্ত্রী তার স্বামীর কাছ থেকে বিচ্ছেদের পর থেকে স্থায়ীভাবে ভরণপোষণ পেতে পারে। এছাড়া খ্রিষ্টান ধর্মে সন্তানের ভরণপোষণ সম্পর্কেও বলা হয়েছে।
প্রশ্নঃ খ্রিস্টান আইনে স্ত্রীর ভরণপোষণ কি রকম হয় ?
উত্তরঃ খ্রিস্টান পারিবারিক আইন অনুযায়ী স্ত্রী-সন্তানদের ভরণপোষণের দায়িত্ব স্বামী বা পিতার। বিয়ে বর্তমান থাকাকালীন অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর ভরণপোষণ দিবেন।
প্রশ্নঃ বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটলেও কি আদালতের আদেশে স্বামী-প্রাক্তন স্ত্রীকে ভরণপোষণ দিবেন?
উত্তরঃ হ্যাঁ, বিয়ে বিচ্ছেদের কারণে কখনোই স্বামী ভরণপোষণ দেয়া থেকে বিরত থাকতে পারবেন না।
প্রশ্নঃ সন্তানের ভরণপোষণের ক্ষেত্রে মা-বাবার দায়িত্ব কি ?
উত্তরঃ মা-বাবার সম্পর্ক ভেঙ্গে যাবার পর সন্তানের ভরণপোষণের প্রশ্নটি আদালতের এখতিয়ারধীন। সন্তানের কল্যাণের কথা চিন্তা করে মা-বাবার আর্থিক সামর্থ্যের বিবেচনায় আদালত নির্দেশ দিবেন যে, মা-বাবা কে কি পরিমাণ ভরণপোষণ সন্তানদের দিবেন।
প্রশ্নঃ ভরণপোষণের অধিকার পেতে কোন ধারায় মামলা করতে হবে ?
উত্তরঃ ভরণপোষণের অধিকার পেতে ফৌজদারী কার্যবিধি, পারিবারিক আদালত, মুসলিম পারিবারিক আইন এ মামলা করতে পারেন।
প্রশ্নঃ সন্তানের ভরণপোষণ আদায়ের মামলা কোথায় করা যাবে ?
উত্তরঃ সন্তানের ভরণপোষণ আদায়ের মামলা ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্ট বা পারিবারিক আদালতে করা যাবে। ব্যাখ্যা: ৬
প্রশ্নঃ বিবাহিত মুসলিম নারী কখন স্বামীর কাছ থেকে আইনতঃ ভরণপোষণ পায় না –
উত্তরঃ তালাক কা
ভরণপোষণের অধিকার
ভরণপোষণের অধিকার কনটেন্টটিতে স্ত্রীর ভরণপোষণ, সন্তানের ভরণপোষণ, মা-বাবার ভরণপোষণ, দরিদ্র আত্মীয়ের ভরণপোষণ, হিন্দু আইনে ভরণপোষণ, খ্রীস্টান আইনে ভরণপোষণ, বিয়ে বিচ্ছেদের পর ভরণপোষণ, ভরণপোষণের দাবিতে কোথায় প্রতিকার পাওয়া যাবে , ভরণপোষণের অধিকার কখন নষ্ট হয় এই সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে ।
ভরণপোষণের অধিকার
প্রশ্নঃ আমাদের বিয়ে হয়েছে একবছর। আমার স্বামী আমাকে উঠিয়ে নিচ্ছে না আবার ভরণপোষণও দিচ্ছে না, এখন কি করা যায় ?
উত্তরঃ তাহলে সে অবশ্যই ভরণপোষণ দিতে বাধ্য। এমন কি, কাবিন নামায় ভরণপোষণ দেয়ার কথা না থাকলেও আইন অনুসারে স্বামী স্ত্রীকে ভরণ পোষণ দিতে বাধ্য।
প্রশ্নঃ আমি কি তাহলে ভরণপোষণ পাবো ?
উত্তরঃ কেন নয়, অবশ্যই আপনি ভরণপোষণ পাবেন। স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, বাবা-মা ও দরিদ্র্য আত্মীয়রা ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী। একজন সক্ষম ও উপার্জনশীল ব্যক্তি তার স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, বাবা-মা ও দরিদ্র্য আত্মীয়দের ভরণপোষণ দিতে বাধ্য।
প্রশ্নঃ আমি শুনেছি স্ত্রীর ভরণপোষণ নাকি বিভিন্ন রকম হয় ?
উত্তরঃ : হ্যাঁ, স্ত্রীর ভরণপোষণের ক্ষেত্রে¾ ‘বিবাহিত অবস্থায় একসাথে থাকা, আলাদা থাকা বা তালাকের পর’ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। বিয়ের ফলে কিছু আইনগত অধিকার ও দায়িত্ব সৃষ্টি হয়। যেমন-একত্রে থাকার অধিকার, দেনমোহরের অধিকার, স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর মতামতকে সম্মান প্রদর্শন, স্বামী স্ত্রী পরস্পরের সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে পাবার অধিকার, ভরণপোষণের অধিকার। ভরণপোষণ স্বামীর দায়িত্ব ও স্ত্রীর অধিকার। তাই আইন অনুযায়ী এটা ধরেই নেয়া হয় যে, স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ পাবেন। ভরণপোষণ প্রদানের পর্যায়সমূহ হল-
১।বিবাহিত অবস্থায় ভরণপোষণ
২।বিবাহিত কিন্তু পৃথক থাকা অবস্থায় ভরণপোষণ
৩।বিয়ে–বিচ্ছেদের পর ভরণপোষণ
প্রশ্নঃ বিবাহিত অবস্থায় ভরণপোষণ কি ধরণের ?
উত্তরঃ বিয়ের সম্পর্ক থাকা অবস্থায় স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ পাবেন। তবে এর কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় নি। স্বামীর আর্থিক অবস্থা অনুযায়ী ভরণপোষণ দেবার ক্ষমতা নির্ভর করে।
প্রশ্নঃ আচ্ছা, সন্তানের ভরণপোষণের ক্ষেত্রে তো মা-বাবার দায়িত্ব আছে, তাই না ?
উত্তরঃ হ্যাঁ, মুসলিম আইন অনুযায়ী সন্তানের স্বাভাবিক অভিভাবক বাবা এবং মা মূলতঃ সন্তান লালন পালন করেন। এক্ষেত্রে মাতা-পিতার আলাদা দায়িত্ব আছে।
প্র্শ্নঃ ভরণপোষণের ক্ষেত্রে পিতার দায়িত্ব কি ?
উত্তরঃ একজন মুসলমান পুরুষ সাবালক হওয়া পর্যন্ত ছেলেকে এবং বিয়ের আগ পর্যন্ত মেয়েকে ভরণপোষণ দিতে বাধ্য।
প্রশ্নঃ বিয়ের পর মেয়ে যদি তালাকপ্রাপ্ত হয় ?
উত্তরঃ বিধবা ও তালাক প্রাপ্তা মেয়ে যদি সামর্থবান না হন সেক্ষেত্রে পিতা তাদেরকে ভরণপোষণ দিতে বাধ্য, তবে বিধবা পুত্রবধুকে ভরণপোষণ দিতে তিনি বাধ্য নন।
প্রশ্নঃ সাবালকত্ব অর্জনের পরও যদি সন্তানরা নিজ ভরণপোষণ যোগাতে সমর্থ না হয় তবে ?
উত্তরঃ আইন বাবার কাছে ভরণপোষণ দাবি করাকে অনুমতি দেয়। তবে এক্ষেত্রে পিতা সাবালক সন্তানদের ভরণপোষণ দিতে বাধ্য নন।
প্রশ্নঃ অসুস্থ ও অক্ষম সন্তানদের ভরণপোষণের দায়িত্বও কি বাবার ?
উত্তরঃ হ্যাঁ, অসুস্থ ও অক্ষম সন্তানদের ভরণপোষণের দায়িত্ব বাবার।
প্রশ্নঃ মা যখন সন্তানের জিম্মাদার তখনও বাবা ভরণপোষণ দিবেন ?
উত্তরঃ মা-বাবার বিচ্ছেদের পরেও মা ছেলেকে ৭ বছর বয়স পর্যন্ত ও মেয়েকে বয়োঃসন্ধি পর্যন্ত নিজের কাছে রেখে রক্ষণাবেক্ষণ করার অধিকারী। এই সময়ে সন্তানেরা বাবার কাছ থেকে আলাদা হয়ে মায়ের সঙ্গে বসবাস করলেও বাবা সন্তানের ভরণপোষণ দানে আইনত বাধ্য।
প্রশ্নঃ ভরণপোষণের ক্ষেত্রে মায়ের দায়িত্ব কি ?
উত্তরঃ শুধুমাত্র বাবা সব সময় সন্তানের ভরণপোষণ দিতে বাধ্য নন। যদি কোন মা, বাবার চেয়ে স্বচ্ছল হন তাহলে মাও বাবার মতো সন্তানের ভরণপোষণ দিতে বাধ্য। স্ত্রীর সামাজিক অবস্থা, প্রয়োজন, স্বামীর আর্থিক অবস্থা ইত্যাদি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করেই সাধারণত ভরণপোষণ নির্ধারিত হয়ে থাকে।
প্রশ্নঃ মা-বাবার ভরণপোষণের ক্ষেত্রেও তো সন্তানের দায়িত্ব আছে, তাই না ?
উত্তরঃ হ্যাঁ, দরিদ্র ও অক্ষম বাবা-মাকে ভরণপোষণ দেয়া সন্তানের নৈতিক দায়িত্ব। আদালত বাবা-মার ভরণপোষণের পরিমাণ নির্ধারণ করে দিতে পারে এবং সন্তানদের তা দিতে আদেশ প্রদান করতে পারে।
প্রশ্নঃ স্বচ্ছল সন্তানেরাও কি গরিব মা-বাবাকে ভরণপোষণ দিবে ?
উত্তরঃ মা যদি স্বচ্ছলও হন তবু গরিব ছেলে তাকে দেখতে বাধ্য। উপার্জনক্ষম ছেলেমাত্র গরিব মা-বাবাকে দেখবে বা লালন- পালন করবে।এছাড়া আত্মীয়ের ভরণপোষণের ক্ষেত্রেও কিছু দায়িত্ব আছে। দরিদ্র আত্মীয়রাও ভরণপোষণ পাবার অধিকারী। উত্তরাধিকারে তাদের প্রাপ্য অংশের অনুপাতে তাদের ভরণপোষণ দেয়া যায়। উল্লেখ্য, দাদা-দাদীও নাতির কাছে ভরণপোষণ পেতে পারেন। দাদা-দাদী গরিব না হলে নাতিকে তাদের ভরণপোষণ দিতে হবে না।
প্রশ্নঃ আচ্ছা, মুসলিম আইনেই কি শুধু ভরণপোষণের অধিকার আছে ? হিন্দু আইনে কি কিছু নেই ?
উত্তরঃ হিন্দু আইনেও কোন ব্যক্তির ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকার রয়েছে, যেমন :
১।একজন হিন্দুর কোন সম্পত্তি না থাকলেও সে তার নাবালক ছেলে, অবিবাহিতা মেয়ে ও বাবা-মার ভরণপোষণ করতে আইনতঃ বাধ্য। দায়ভাগা মতে, বাবা সাবালক ছেলেকে ভরণপোষণ করতে আইনতঃ বাধ্য নন।
২।কর্তা যৌথ পরিবারের সকল পুরুষ, তাদের স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের ভরণপোষণে আইনতঃ বাধ্য।
৩।একজন মৃত ব্যক্তি যাদের ভরণপোষণ করতে আইনতঃ বাধ্য ছিল, মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীও মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি হতে তাদের ভরণপোষণ করতে আইনতঃ বাধ্য।
৪।বিবাহ না হওয়া পর্যন্ত বাবা তার কন্যা সন্তানের ভরণপোষণ করতে বাধ্য। বাবার অবর্তমানে কন্যার ভরণপোষণ বাবার সম্পত্তি হতেই চলতে থাকবে।
৫।অক্ষমতা বা অযোগ্যতাহেতু কেউ পৈতৃক সম্পত্তির অধিকারে বঞ্চিত থাকলে তাকে ও তার পরিবারবর্গকে অক্ষম ব্যক্তির বাবা ও বাবার অবর্তমানে বাবার উত্তরাধিকারী যথাযোগ্য ভরণপোষণ দিতে বাধ্য। এছাড়া স্ত্রীর ভরণপোষণের ক্ষেত্রে হিন্দু ধর্মে কিছু আইন আছে।
প্রশ্নঃ খ্রিষ্টান ধর্মে কি ভরণপোষণের অধিকার নেই ?
উত্তরঃ হ্যাঁ, আছে। ডিভোর্স এ্যাক্টের ৩৭ ধারা অনুযায়ী, স্ত্রী তার স্বামীর কাছ থেকে বিচ্ছেদের পর থেকে স্থায়ীভাবে ভরণপোষণ পেতে পারে। এছাড়া খ্রিষ্টান ধর্মে সন্তানের ভরণপোষণ সম্পর্কেও বলা হয়েছে।
প্রশ্নঃ খ্রিস্টান আইনে স্ত্রীর ভরণপোষণ কি রকম হয় ?
উত্তরঃ খ্রিস্টান পারিবারিক আইন অনুযায়ী স্ত্রী-সন্তানদের ভরণপোষণের দায়িত্ব স্বামী বা পিতার। বিয়ে বর্তমান থাকাকালীন অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর ভরণপোষণ দিবেন।
প্রশ্নঃ বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটলেও কি আদালতের আদেশে স্বামী-প্রাক্তন স্ত্রীকে ভরণপোষণ দিবেন?
উত্তরঃ হ্যাঁ, বিয়ে বিচ্ছেদের কারণে কখনোই স্বামী ভরণপোষণ দেয়া থেকে বিরত থাকতে পারবেন না।
প্রশ্নঃ সন্তানের ভরণপোষণের ক্ষেত্রে মা-বাবার দায়িত্ব কি ?
উত্তরঃ মা-বাবার সম্পর্ক ভেঙ্গে যাবার পর সন্তানের ভরণপোষণের প্রশ্নটি আদালতের এখতিয়ারধীন। সন্তানের কল্যাণের কথা চিন্তা করে মা-বাবার আর্থিক সামর্থ্যের বিবেচনায় আদালত নির্দেশ দিবেন যে, মা-বাবা কে কি পরিমাণ ভরণপোষণ সন্তানদের দিবেন।
প্রশ্নঃ ভরণপোষণের অধিকার পেতে কোন ধারায় মামলা করতে হবে ?
উত্তরঃ ভরণপোষণের অধিকার পেতে ফৌজদারী কার্যবিধি, পারিবারিক আদালত, মুসলিম পারিবারিক আইন এ মামলা করতে পারেন।
প্রশ্নঃ সন্তানের ভরণপোষণ আদায়ের মামলা কোথায় করা যাবে ?
উত্তরঃ সন্তানের ভরণপোষণ আদায়ের মামলা ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্ট বা পারিবারিক আদালতে করা যাবে। ব্যাখ্যা: ৬
প্রশ্নঃ বিবাহিত মুসলিম নারী কখন স্বামীর কাছ থেকে আইনতঃ ভরণপোষণ পায় না –
উত্তরঃ তালাক কার্যকর হওয়ার পর অথবা স্বামীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন যুক্তি সঙ্গত কারণ ছাড়া আলাদাভাবে বসবাস করলে স্ত্রী ভরণপোষণ পাবে না।
প্রশ্নঃ তাহলে হিন্দু আইনে কি আছে ?
উত্তরঃ স্ত্রী যদি অন্য ধর্মে ধর্মান্তরিত হয় অথবা স্ত্রী যদি আইনসঙ্গত কারণ ছাড়াই স্বামীর সাথে স্ত্রীরূপে বসবাসে অনিচ্ছুক হয়। তাহলে সে ভরণপোষণ পায় না।
প্রশ্নঃ খ্রিস্টান আইনেও কি এমন কিছু আছে ?
উত্তরঃ হ্যাঁ আছে, খ্রিস্টান আইনে কখনোই স্ত্রী স্বামীর পক্ষ থেকে ভরণপেষণ লাভে বঞ্চিত হয় না।
র্যকর হওয়ার পর অথবা স্বামীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন যুক্তি সঙ্গত কারণ ছাড়া আলাদাভাবে বসবাস করলে স্ত্রী ভরণপোষণ পাবে না।
প্রশ্নঃ তাহলে হিন্দু আইনে কি আছে ?
উত্তরঃ স্ত্রী যদি অন্য ধর্মে ধর্মান্তরিত হয় অথবা স্ত্রী যদি আইনসঙ্গত কারণ ছাড়াই স্বামীর সাথে স্ত্রীরূপে বসবাসে অনিচ্ছুক হয়। তাহলে সে ভরণপোষণ পায় না।
প্রশ্নঃ খ্রিস্টান আইনেও কি এমন কিছু আছে ?
উত্তরঃ হ্যাঁ আছে, খ্রিস্টান আইনে কখনোই স্ত্রী স্বামীর পক্ষ থেকে ভরণপেষণ লাভে বঞ্চিত হয় না।
ভরণপোষণের অধিকার কনটেন্টটিতে স্ত্রীর ভরণপোষণ, সন্তানের ভরণপোষণ, মা-বাবার ভরণপোষণ, দরিদ্র আত্মীয়ের ভরণপোষণ, হিন্দু আইনে ভরণপোষণ, খ্রীস্টান আইনে ভরণপোষণ, বিয়ে বিচ্ছেদের পর ভরণপোষণ, ভরণপোষণের দাবিতে কোথায় প্রতিকার পাওয়া যাবে , ভরণপোষণের অধিকার কখন নষ্ট হয় এই সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে ।
ভরণপোষণের অধিকার
প্রশ্নঃ আমাদের বিয়ে হয়েছে একবছর। আমার স্বামী আমাকে উঠিয়ে নিচ্ছে না আবার ভরণপোষণও দিচ্ছে না, এখন কি করা যায় ?
উত্তরঃ তাহলে সে অবশ্যই ভরণপোষণ দিতে বাধ্য। এমন কি, কাবিন নামায় ভরণপোষণ দেয়ার কথা না থাকলেও আইন অনুসারে স্বামী স্ত্রীকে ভরণ পোষণ দিতে বাধ্য।
প্রশ্নঃ আমি কি তাহলে ভরণপোষণ পাবো
উত্তরঃ কেন নয়, অবশ্যই আপনি ভরণপোষণ পাবেন। স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, বাবা-মা ও দরিদ্র্য আত্মীয়রা ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী। একজন সক্ষম ও উপার্জনশীল ব্যক্তি তার স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, বাবা-মা ও দরিদ্র্য আত্মীয়দের ভরণপোষণ দিতে বাধ্য।
প্রশ্নঃ আমি শুনেছি স্ত্রীর ভরণপোষণ নাকি বিভিন্ন রকম হয় ?
উকিল হ্যাঁ, স্ত্রীর ভরণপোষণের ক্ষেত্রে¾ ‘বিবাহিত অবস্থায় একসাথে থাকা, আলাদা থাকা বা তালাকের পর’ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। বিয়ের ফলে কিছু আইনগত অধিকার ও দায়িত্ব সৃষ্টি হয়। যেমন-একত্রে থাকার অধিকার, দেনমোহরের অধিকার, স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর মতামতকে সম্মান প্রদর্শন, স্বামী স্ত্রী পরস্পরের সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে পাবার অধিকার, ভরণপোষণের অধিকার। ভরণপোষণ স্বামীর দায়িত্ব ও স্ত্রীর অধিকার। তাই আইন অনুযায়ী এটা ধরেই নেয়া হয় যে, স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ পাবেন। ভরণপোষণ প্রদানের পর্যায়সমূহ হল-
১।বিবাহিত অবস্থায় ভরণপোষণ
২।বিবাহিত কিন্তু পৃথক থাকা অবস্থায় ভরণপোষণ
৩।বিয়ে বিচ্ছেদের পর ভরণপোষণ
প্রশ্নঃ বিবাহিত অবস্থায় ভরণপোষণ কি ধরণের ?
উত্তরঃ বিয়ের সম্পর্ক থাকা অবস্থায় স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ পাবেন। তবে এর কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় নি। স্বামীর আর্থিক অবস্থা অনুযায়ী ভরণপোষণ দেবার ক্ষমতা নির্ভর করে।
প্রশ্নঃ আচ্ছা, সন্তানের ভরণপোষণের ক্ষেত্রে তো মা-বাবার দায়িত্ব আছে, তাই না ?
উত্তরঃ হ্যাঁ, মুসলিম আইন অনুযায়ী সন্তানের স্বাভাবিক অভিভাবক বাবা এবং মা মূলতঃ সন্তান লালন পালন করেন। এক্ষেত্রে মাতা-পিতার আলাদা দায়িত্ব আছে।
প্র্শ্নঃ ভরণপোষণের ক্ষেত্রে পিতার দায়িত্ব কি ?
উত্তরঃ একজন মুসলমান পুরুষ সাবালক হওয়া পর্যন্ত ছেলেকে এবং বিয়ের আগ পর্যন্ত মেয়েকে ভরণপোষণ দিতে বাধ্য।
প্রশ্নঃ বিয়ের পর মেয়ে যদি তালাকপ্রাপ্ত হয় ?
উত্তরঃ বিধবা ও তালাক প্রাপ্তা মেয়ে যদি সামর্থবান না হন সেক্ষেত্রে পিতা তাদেরকে ভরণপোষণ দিতে বাধ্য, তবে বিধবা পুত্রবধুকে ভরণপোষণ দিতে তিনি বাধ্য নন।
প্রশ্নঃ সাবালকত্ব অর্জনের পরও যদি সন্তানরা নিজ ভরণপোষণ যোগাতে সমর্থ না হয় তবে ?
উত্তরঃ আইন বাবার কাছে ভরণপোষণ দাবি করাকে অনুমতি দেয়। তবে এক্ষেত্রে পিতা সাবালক সন্তানদের ভরণপোষণ দিতে বাধ্য নন।
প্রশ্নঃ অসুস্থ ও অক্ষম সন্তানদের ভরণপোষণের দায়িত্বও কি বাবার ?
উত্তরঃ হ্যাঁ, অসুস্থ ও অক্ষম সন্তানদের ভরণপোষণের দায়িত্ব বাবার।
প্রশ্নঃ মা যখন সন্তানের জিম্মাদার তখনও বাবা ভরণপোষণ দিবেন ?
উত্তরঃ > মা-বাবার বিচ্ছেদের পরেও মা ছেলেকে ৭ বছর বয়স পর্যন্ত ও মেয়েকে বয়োঃসন্ধি পর্যন্ত নিজের কাছে রেখে রক্ষণাবেক্ষণ করার অধিকারী। এই সময়ে সন্তানেরা বাবার কাছ থেকে আলাদা হয়ে মায়ের সঙ্গে বসবাস করলেও বাবা সন্তানের ভরণপোষণ দানে আইনত বাধ্য।
প্রশ্নঃ ভরণপোষণের ক্ষেত্রে মায়ের দায়িত্ব কি ?
উত্তরঃ শুধুমাত্র বাবা সব সময় সন্তানের ভরণপোষণ দিতে বাধ্য নন। যদি কোন মা, বাবার চেয়ে স্বচ্ছল হন তাহলে মাও বাবার মতো সন্তানের ভরণপোষণ দিতে বাধ্য। স্ত্রীর সামাজিক অবস্থা, প্রয়োজন, স্বামীর আর্থিক অবস্থা ইত্যাদি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করেই সাধারণত ভরণপোষণ নির্ধারিত হয়ে থাকে।
প্রশ্নঃ মা-বাবার ভরণপোষণের ক্ষেত্রেও তো সন্তানের দায়িত্ব আছে, তাই না ?
উত্তরঃ হ্যাঁ, দরিদ্র ও অক্ষম বাবা-মাকে ভরণপোষণ দেয়া সন্তানের নৈতিক দায়িত্ব। আদালত বাবা-মার ভরণপোষণের পরিমাণ নির্ধারণ করে দিতে পারে এবং সন্তানদের তা দিতে আদেশ প্রদান করতে পারে।
প্রশ্নঃ স্বচ্ছল সন্তানেরাও কি গরিব মা-বাবাকে ভরণপোষণ দিবে ?
উত্তরঃ মা যদি স্বচ্ছলও হন তবু গরিব ছেলে তাকে দেখতে বাধ্য। উপার্জনক্ষম ছেলেমাত্র গরিব মা-বাবাকে দেখবে বা লালন- পালন করবে।এছাড়া আত্মীয়ের ভরণপোষণের ক্ষেত্রেও কিছু দায়িত্ব আছে। দরিদ্র আত্মীয়রাও ভরণপোষণ পাবার অধিকারী। উত্তরাধিকারে তাদের প্রাপ্য অংশের অনুপাতে তাদের ভরণপোষণ দেয়া যায়। উল্লেখ্য, দাদা-দাদীও নাতির কাছে ভরণপোষণ পেতে পারেন। দাদা-দাদী গরিব না হলে নাতিকে তাদের ভরণপোষণ দিতে হবে না।
প্রশ্নঃ আচ্ছা, মুসলিম আইনেই কি শুধু ভরণপোষণের অধিকার আছে ? হিন্দু আইনে কি কিছু নেই ?
উত্তরঃ হিন্দু আইনেও কোন ব্যক্তির ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকার রয়েছে, যেমন :
১।একজন হিন্দুর কোন সম্পত্তি না থাকলেও সে তার নাবালক ছেলে, অবিবাহিতা মেয়ে ও বাবা-মার ভরণপোষণ করতে আইনতঃ বাধ্য। দায়ভাগা মতে, বাবা সাবালক ছেলেকে ভরণপোষণ করতে আইনতঃ বাধ্য নন।
২।কর্তা যৌথ পরিবারের সকল পুরুষ, তাদের স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের ভরণপোষণে আইনতঃ বাধ্য।
৩।একজন মৃত ব্যক্তি যাদের ভরণপোষণ করতে আইনতঃ বাধ্য ছিল, মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীও মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি হতে তাদের ভরণপোষণ করতে আইনতঃ বাধ্য।
৪।বিবাহ না হওয়া পর্যন্ত বাবা তার কন্যা সন্তানের ভরণপোষণ করতে বাধ্য। বাবার অবর্তমানে কন্যার ভরণপোষণ বাবার সম্পত্তি হতেই চলতে থাকবে।
৫।অক্ষমতা বা অযোগ্যতাহেতু কেউ পৈতৃক সম্পত্তির অধিকারে বঞ্চিত থাকলে তাকে ও তার পরিবারবর্গকে অক্ষম ব্যক্তির বাবা ও বাবার অবর্তমানে বাবার উত্তরাধিকারী যথাযোগ্য ভরণপোষণ দিতে বাধ্য। এছাড়া স্ত্রীর ভরণপোষণের ক্ষেত্রে হিন্দু ধর্মে কিছু আইন আছে।
প্রশ্নঃ খ্রিষ্টান ধর্মে কি ভরণপোষণের অধিকার নেই ?
উত্তরঃ হ্যাঁ, আছে। ডিভোর্স এ্যাক্টের ৩৭ ধারা অনুযায়ী, স্ত্রী তার স্বামীর কাছ থেকে বিচ্ছেদের পর থেকে স্থায়ীভাবে ভরণপোষণ পেতে পারে। এছাড়া খ্রিষ্টান ধর্মে সন্তানের ভরণপোষণ সম্পর্কেও বলা হয়েছে।
প্রশ্নঃ খ্রিস্টান আইনে স্ত্রীর ভরণপোষণ কি রকম হয় ?
উত্তরঃ খ্রিস্টান পারিবারিক আইন অনুযায়ী স্ত্রী-সন্তানদের ভরণপোষণের দায়িত্ব স্বামী বা পিতার। বিয়ে বর্তমান থাকাকালীন অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর ভরণপোষণ দিবেন।
প্রশ্নঃ বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটলেও কি আদালতের আদেশে স্বামী-প্রাক্তন স্ত্রীকে ভরণপোষণ দিবেন?
উত্তরঃ হ্যাঁ, বিয়ে বিচ্ছেদের কারণে কখনোই স্বামী ভরণপোষণ দেয়া থেকে বিরত থাকতে পারবেন না।
প্রশ্নঃ সন্তানের ভরণপোষণের ক্ষেত্রে মা-বাবার দায়িত্ব কি ?
উত্তরঃ মা-বাবার সম্পর্ক ভেঙ্গে যাবার পর সন্তানের ভরণপোষণের প্রশ্নটি আদালতের এখতিয়ারধীন। সন্তানের কল্যাণের কথা চিন্তা করে মা-বাবার আর্থিক সামর্থ্যের বিবেচনায় আদালত নির্দেশ দিবেন যে, মা-বাবা কে কি পরিমাণ ভরণপোষণ সন্তানদের দিবেন।
প্রশ্নঃ ভরণপোষণের অধিকার পেতে কোন ধারায় মামলা করতে হবে ?
উত্তরঃ ভরণপোষণের অধিকার পেতে ফৌজদারী কার্যবিধি, পারিবারিক আদালত, মুসলিম পারিবারিক আইন এ মামলা করতে পারেন।
প্রশ্নঃ সন্তানের ভরণপোষণ আদায়ের মামলা কোথায় করা যাবে ?
উত্তরঃ সন্তানের ভরণপোষণ আদায়ের মামলা ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্ট বা পারিবারিক আদালতে করা যাবে। ব্যাখ্যা: ৬
প্রশ্নঃ বিবাহিত মুসলিম নারী কখন স্বামীর কাছ থেকে আইনতঃ ভরণপোষণ পায় না –
উত্তরঃ তালাক কার্যকর হওয়ার পর অথবা স্বামীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন যুক্তি সঙ্গত কারণ ছাড়া আলাদাভাবে বসবাস করলে স্ত্রী ভরণপোষণ পাবে না।
প্রশ্নঃ তাহলে হিন্দু আইনে কি আছে ?
উত্তরঃ স্ত্রী যদি অন্য ধর্মে ধর্মান্তরিত হয় অথবা স্ত্রী যদি আইনসঙ্গত কারণ ছাড়াই স্বামীর সাথে স্ত্রীরূপে বসবাসে অনিচ্ছুক হয়। তাহলে সে ভরণপোষণ পায় না।
প্রশ্নঃ খ্রিস্টান আইনেও কি এমন কিছু আছে ?
উত্তরঃ হ্যাঁ আছে, খ্রিস্টান আইনে কখনোই স্ত্রী স্বামীর পক্ষ থেকে ভরণপেষণ লাভে বঞ্চিত হয় না।