M/s. বালুরপাড় হোল্ডিংস (ব্লগ)

জমি সংক্রান্ত আইন ও সমস্যর সমাধান এখানেই

মামলা প্রত্যাহার করার নিয়ম

মামলা প্রত্যাহার করার নিয়ম

মামলা করার পর যদি বাদী তার প্রতিপক্ষের সঙ্গে আপস করে ফেলেন, সেক্ষেত্রে মামলা প্রত্যাহারের সুযোগ রয়েছে। ফৌজদারি কিছু গুরুতর অপরাধ ছাড়া আদালত অধিকাংশ সময় ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলা প্রত্যাহারে সহায়তা দিয়ে থাকে। মামলা প্রত্যাহার বিষয়ে দেওয়ানি ও ফৌজদারি কার্যবিধির আলোকে ।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে সমঝোতার ভিত্তিতে মামলা প্রত্যাহার হয়ফৌজদারি বা দেওয়ানি মামলা দায়ের করবার পর মামলা দায়েরকারী যদি মনে করেন যে তিনি আর মামলাটি পরিচালন করবেন না, সেক্ষেত্রে মামলা প্রত্যাহারের সুযোগ দেয়া হয়েছে আইনে। আপস-অযোগ্য ফৌজদারি মামলাগুলোর প্রত্যাহারে আদালত খুব সতর্ক থাকার চেষ্টা করলেও আপসযোগ্য মামলাগুলোতে সহজেই মামলা প্রত্যাহার করা যায়। আর দেওয়ানি মামলাগুলো প্রত্যাহার করাও বেশ সহজ। ফৌজদারি কার্যবিধি ও দেওয়ানি কার্যবিধিতে মামলা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া বলা আছে।
ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার


ফৌজদারি মামলা সাধারণত দু’রকম

১।সিআর কেস

২। জিআর কেস।

জিআর কেসগুলো সাধারণত থানায় দায়ের করা হয় আর সিআর কেসগুলো দায়ের হয় সরাসরি ফৌজদারি আদালতে। জিআর কেসগুলোতে বাদীর পক্ষে রাষ্ট্র নিজেই আইনজীবী নিযুক্ত করেন, যাদের বলা হয় হয় পাবলিক প্রসিকিউটর। আর সিআর মামলাগুলোতে নালিশকারীকেই ব্যক্তিগতভাবে আইনজীবী নিযুক্ত করে মামলা পরিচালনা করতে হয়।
কোনো মামলায় পর্যাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাব কিংবা মামলার পক্ষগণের মধ্যে সমঝোতার কারণে মামলা প্রত্যাহারের প্রসঙ্গটি সামনে আসতে পারে। মামলা প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধিতে দুই রকমের বিধান রাখা আছে। যেসব জিআর কেসে রাষ্ট্র নিজেই পক্ষ, সেসব মামলায় পাবলিক প্রসিকিউটরের তরফ থেকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৪ ধারায় মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করা যায়। আর সিআর কেসে নালিশকারী বা তার পক্ষ থেকে নিযুক্ত আইনজীবী মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করতে পারেন ফৌজদারি কার্যবিধির ২৪৮ ধারার অধীনে।
সরকারি কৌসুলির পক্ষ থেকে মামলা প্রত্যাহার
ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৪ ধারায় বলা হয়েছে যে, সরকারি কৌসুলি বা পাবলিক প্রসিকিউটর আদালতের অনুমতি নিয়ে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনীত মোকদ্দমায়, সাধারণভাবে যেসব অপরাধে তার বিচার হচ্ছে, তার যে কোনো এক বা একাধিক অপরাধ সম্পর্কে পরিচালনা থেকে সরে যেতে পারেন। অভিযোগনামা প্রণয়নের আগে সরে গেলে ওই এক বা একাধিক অপরাধ সম্পর্কে আসামির অব্যাহতি হবে; এবং অভিযোগ প্রণয়নের পর সরে গেলে অথবা এই আইন অনুসারে কোনো অভিযোগনামা প্রণয়ন করা প্রয়োজন না হলে ওই এক বা একাধিক অপরাধ সম্পর্কে আসামিকে খালাস দিতে হবে। মামলা পরিচালনা থেকে সরে যাওয়ার উপযুক্ত কারণ সম্পর্কে সরকারি অভিযোক্তা আদালতকে সন্তুষ্ট করবেন। কেবল সরকারের তরফ থেকে মামলা থেকে সরে যাওয়ার আদেশ আদালত কর্তৃক অনুমতি প্রদানের জন্য যথেষ্ট কারণ হবে না।
৪৯৪ ধারার অধীনে মামলা প্রত্যাহারে বেশ কিছু বিষয় আদালতের পর্যবেক্ষণে গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। যেমন_

১। মামলা প্রত্যাহারের আবেদন কেবল পাবলিক প্রসিকিউটরের তরফ থেকেই হতে হবে। এজাহারকারী কিংবা আসামির আবেদন কিংবা সরকারের কোনো আদেশের বলে মামলা প্রত্যাহার করা যাবে না।

২।মামলা প্রত্যাহারের যুক্তিযুক্ত কারণ কৌসুলির পক্ষ থেকে আদালতের সামনে ব্যাখ্যা করতে হবে। কেবল সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে আদালত মামলা প্রত্যাহারের আদেশ দেবে না। মামলা প্রত্যাহার সম্পর্কে আদালতের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। সুতরাং, আদালত যদি মামলা প্রত্যাহারের কারণ সম্পর্কে সন্তুষ্ট না হয়, সেক্ষেত্রে প্রত্যাহারের অনুমতি না দিয়ে মামলা এগিয়ে নেয়ার আদেশ দেবে। মামলার ভিকটিম বা এজাহারকারী যদি মনে করে রাষ্ট্রপক্ষ অহেতুক তাদের মামলাটি প্রত্যাহার করে নিয়েছে, সে ক্ষেত্রে ক্ষেত্রবিশেষে দায়রা জজ আদালত কিংবা হাইকোর্ট বিভাগে রিভিশন দায়ের করতে পারে।
নালিশকারীর পক্ষ থেকে মামলা প্রত্যাহার
ফৌজদারি কার্যবিধির ২৪৮ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোনো মামলার চূড়ান্ত আদেশ হওয়ার আগ পর্যন্ত ফড়িয়াদি যদি ম্যাজিস্ট্রেটের সন্তুষ্টিবিধান করতে পারেন যে, তাকে নালিশ প্রত্যাহারের অনুমতি দেয়ার পর্যাপ্ত কারণ রয়েছে, তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট তাকে সেই নালিশ প্রত্যাহারের অনুমতি দেবেন এবং আসামিকে খালাস দেবেন। উল্লেখ্য যে, এই ধারাটি শুধু নিষ্পত্তিযোগ্য মামলার ক্ষেত্রে, যা ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪৫ ধারায় বর্ণনা করা হয়েছে। সেজন্য অভিযোগকারী এই ধারা অনুসারে নালিশ প্রত্যাহার করতে পারেন।
দেওয়ানি মামলা প্রত্যাহার
দেওয়ানি কার্যবিধির ২৩ আদেশের ১ নিয়ম অনুসারে, দেওয়ানি মামলা হওয়ার পর যে কোনো সময়ে বাদী সব বা যে কোনো বিবাদীর বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করতে বা আংশিক দাবি পরিত্যাগ করতে পারেন। যে ক্ষেত্রে আদালত এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে, কোনো পদ্ধতিগত ত্রুটির জন্য মোকদ্দমাটি ব্যর্থ হতে বাধ্য এবং মামলার বিষয়বস্তুর জন্য কিংবা কোনো দাবির অংশের জন্য নতুনভাবে মোকদ্দমা করার জন্য বাদীকে অনুমতি দেয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, সে ক্ষেত্রে আদালত উপযুক্ত শর্তে বাদীকে তার মোকদ্দমা প্রত্যাহার করে অথবা তার আংশিক দাবি পরিত্যাগ করার অনুমতি দিতে পারবেন এবং ওই মোকদ্দমার বিষয়বস্তু সম্পর্কে বা ওইরকম আংশিক দাবি সম্পর্কে পুনরায় মোকদ্দমা করার অনুমতি মঞ্জুর করতে পারেন। আদালতের উলি্লখিত অনুমতি ছাড়া যে ক্ষেত্রে বাদী মোকদ্দমা প্রত্যাহার করেন বা আংশিক দাবি পরিত্যাগ করেন, সেক্ষেত্রে বাদী আদালতের সিদ্ধান্ত অনুসারে মোকদ্দমার খরচার জন্য তিনি দায়ী হবেন এবং ওই বিষয়বস্তু বা আংশিক দাবি সম্পর্কে নতুনভাবে কোনো মোকদ্দমা দায়ের করার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন। এই নিয়মের কোনো বিধানবলে আদালত কয়েকজন বাদীর মধ্যে একজনকে অন্যান্য বাদীর সম্মতি ছাড়া মোকদ্দমা প্রত্যাহার করার অনুমতি দিতে পারেন না।
প্রত্যাহারের পর একই বিষয়ে আর মামলা করা যায় না
নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মামলা প্রত্যাহার করা হলে একই বিষয়ে পুনরায় নতুন করে মামলা করা যায় না। দেওয়ানি মামলার ‘রেস জুডিকাটা’ বা দোবারা নীতি এবং ফৌজদারি মামলার ‘ডাবল জিওপারডি’ বা দোবারা সাজা নীতির আলোকে এ ধরনের মামলাকে বাধা দেয়া হয়। তবে উচ্চতর আদালতে রিভিশন দায়ের করে আদালতকে যদি সন্তুষ্ট করা যায়, সেক্ষেত্রে পুনর্বিচার কিংবা পুনর্তদন্তের নির্দেশ ন্যায়বিচারের স্বার্থে আদালত দিতে পারেন। হাইকোর্ট বিভাগের সহজাত ক্ষমতার অধীনে এ ধরনের আদেশ দেয়ার সুযোগ আছে।

ফৌজদারি মামলায় আপসযোগ্য অপরাধ

ফৌজদারি অপরাধগুলো সমাজের বিরুদ্ধে সংঘটিত হয় বলে অপরাধের বিচার সম্পূর্ণ রাষ্ট্রের হাতে ন্যস্ত থাকে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি চাইলেও অভিযুক্ত ব্যক্তি সহজে বিচার থেকে অব্যাহতি পায় না। কিন্তু দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে সব ধরনের মামলার জন্য আদালতের বাইরে এসে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) ব্যবস্থা রয়েছে, যা আমাদের দেওয়ানি কার্যবিধিকে এক চমৎকার বিশেষত্ব প্রদান করেছে। ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রেও এমন কিছু অপরাধ রয়েছে; যেগুলোর নিষ্পত্তি পক্ষদ্বয়ের পারস্পরিক সমঝোতা বা চুক্তির মাধ্যমে করা যায়। ফৌজদারি কার্যবিধিতে এর নাম দেয়া হয়েছে ‘কম্পাউন্ডিং অফেন্স’ বা ‘আপসযোগ্য অপরাধ’। ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর ৩৪৫ নং ধারায় ‘আপসযোগ্য অপরাধ’ বিষয়ক যাবতীয় বিধান উল্লেখ করা হয়েছে। এটি এমন একটা বিধান যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও অভিযুক্ত ব্যক্তি পারস্পরিক চুক্তির মাধ্যমে ও ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে আদালতের অনুমতি ব্যতিরেকে কিংবা আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে মামলা নিষ্পত্তি করার সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। কম্পাউন্ডিং অফেন্সের ক্ষেত্রে আইনের নীতি হলো এই যে, যেসব অপরাধ তুলনামূলক কমমাত্রার ভয়াবহ এবং যেগুলোয় রাষ্ট্রের স্বার্থের তুলনায় কেবল ব্যক্তিস্বার্থই ক্ষুণ্ন হয়ে থাকে, সেসব অপরাধের বিচার আপসের ভিত্তিতে নিষ্পত্তি হতে পারে। উল্লেখ্য, এভাবে মামলা আপস করার অর্থ মামলা প্রত্যাহার করা নয়। কারণ, মামলা প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে অভিযোগকারী আদালতের শরণাপন্ন হয় এবং আদালতের সন্তুষ্টির ভিত্তিতে মামলা প্রত্যাহার করে। অন্যদিকে ফৌজদারি মামলায় আপসের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন কেবল ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি। মামলা আপস করার মধ্য দিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি মামলা থেকে রেহাই পেয়ে থাকে। এ কারণে কোনো মামলা একবার আপোস করা হলে পুনরায় একই বিষয়ে আদালতে মামলা দায়ের করা যায় না। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪৫ নং ধারায় দ-বিধির অপরাধগুলোকে আপসযোগ্যতার ভিত্তিতে দুভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ভাগে রয়েছে ১৭টি অপরাধের তালিকা, যেগুলো আদালতের অনুমতি ছাড়াই তৃতীয় কলামে উলি্লখিত ব্যক্তি আপস করতে পারবে। আর দ্বিতীয় ভাগে আছে আরো ৪৪টি অপরাধের তালিকা, যেগুলো আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে কলামে উলি্লখিত ব্যক্তি আপস করতে পারে। তবে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪৫ নং ধারার উল্লেখ নেই, এমন কোনো অপরাধ আপস করা যাবে না। বিশেষ আইনে উলি্লখিত অপরাধগুলোও অনাপসযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে। যদি কোনো অনাপোসযোগ্য অপরাধ আইনের বিধান লঙ্ঘন করে আপস করা হয়, তাহলে তা কার্যবিধির ২১৩ ও ২১৪ ধারা আনুযায়ী অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। অপরাধের আপস সাধারণত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির তরফ থেকে করা হয়। এক্ষেত্রে ব্যক্তি যদি নাবালোক হয় তবে তার আইনানুগ অভিভাবকও আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে আপসের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারবে। মামলার যেকোনো পর্যায়েই আপসের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। এমনকি মামলা হাইকোর্ট বিভাগ বা সেশন কোর্টে আপিলরত অবস্থাতেও আপস করা যেতে পারে। তবে কোনো আপস যদি ভয়ভীতি প্রদর্শন, প্ররোচনা বা জোরপূর্বক করা হয়, তবে তা আপস হিসেবে বিবেচিত হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *